ঢাকা: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ষষ্ঠ দফায় তৃতীয় দিনে ৫৮তম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ বিচারকাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ‘বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ষষ্ঠ দফায় তৃতীয় দিনে ৫৮তম সাক্ষী হিসেবে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়েছে। অপর সাক্ষী হলেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. দেলোয়ার হোসেন। এই দুই বিচারক মামলার ১৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী আরও বলেন, বুধবার ষষ্ঠ দফায় তৃতীয় দিনে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৫৮ তম সাক্ষীসহ ৬ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পিপি ফরিদুল বলেন, মামলায় সাক্ষ্যদানের জন্য ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৯ জনকে আদালত নোটিশ দিয়েছিলেন। গত ২৩ আগস্ট থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এতে ষষ্ঠ দফায় দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ৫৭ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এদিকে, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজনভ্যান করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।এর আগে, গত ২৩-২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল সিফাত। পরে দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনে চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া তৃতীয় দফায় তিন দিনে পর্যন্ত ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। মামলায় চতুর্থ দফায় দু’দিনে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। পঞ্চম দফায় তিন দিনে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ষষ্ঠ দফায় দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত সাক্ষ্য দেন আরও ২২ জন। তৃতীয় দিনে মামলায় ৫৮তম সাক্ষীসহ আরও ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় র্যাবকে। ঘটনার ৬ দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। পরে র্যাব পুলিশের দায়ের মামলার ৩ সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব। গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।
Discussion about this post