ঢাকা: দেশে প্রায় আট মিলিয়নের (৮০ লাখ) বেশি মানুষ মাদকাসক্ত। এই আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ ভাগই যুবক। তাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত, আর বাকি ৪০ শতাংশ অশিক্ষত। মাদকের এই ভয়বহতা দূর করতে আইন সংশোধন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রবিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২২ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শামসুল হক এমপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কি মনে আছে, সেই ঐশির কথা কিংবা কেরানীগঞ্জের সেই পরিবারটির কথা। কী ভয়াবহ মাদকের ছোবল ছিল পরিবারগুলোর ওপর। মাদকের এই ছোবল থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে পরিবারের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে হবে। পরিবার সচেতন হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কবে। মনে রাখবেন মাদকের সঙ্গে জড়িতদের শেষ গন্তব্য কিন্তু কারাগার। তাছাড়া ধুকে ধুকে তাদের মরতে হবে। আসাদুজ্জামান বলেন, আক্রান্তরা অধিকাংশই ইয়াবা খায়, এরপর হেরোইন। এখন নতুন আইস বার এসেছে। এসব মাদকের কারবার লাভজনক হওয়ায় যুবসমাজ ঝুঁকে পড়ছে। আমাদের নিজেদের কর্তব্য আমাদের পালন করতে হবে। এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। সচেতনার মাধ্যমেও পরিবর্তন সম্ভব। এখন ১০ ভাগ মানুষ সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, মাদকে একবারেই আসক্ত হয় না, প্রথমে সিগারেট, পরে গাঁজা খেয়ে সে শূন্যে ভেসে বেড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে জিরো টলারেন্স। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন রয়েছে ২০৪১, যেখানে মাদকমুক্ত উন্নত দেশ গড়ার। আমরা মাদক থেকে বাঁচতে পারলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ডোপ টেস্টের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছি। প্রত্যেককে ডোপ টেস্ট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যে যুবকই আক্রান্ত হবেন তাকে আমরা হাসপাতালে পাঠাবো। সরকারি চাকরি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আগেও আমরা ডোপ টেস্ট করাবো। মন্ত্রী বলেন, মাদক নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে। তারা আমাদের যথেষ্ঠ সহযোগিতা করছে। তবে ভয়াল মাদক আসে মায়ানমার থেকে। দেশটির সঙ্গে আলাপ হলে অনেক কথা বলেন, নিয়ন্ত্রণ করবে বলে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই করে না দেশটি। নাফ নদী পার হলেই মায়ানমার। সেই রুট দিয়ে আসে মাদক, আবার দুর্গম পাহাড় থেকে মাদক আসে। দেশটি থেকে মাদক যাতে ঠেকানো যায়, এজন্যই বিজিবিকে আরও শক্তিশালী করছি। এটা প্রতিরোধে হেলিকপ্টার দিয়েছি বিজিবিকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও পরিচালকগণ। এছাড়া পরিচালক (অপারেশন) কুসুম দেওয়ান, পরিচালক (চিকিৎসা ও পূর্ণবাসন) মো. মাসুদ হোসেন, পরিচালক কাজী আবেদ হোসেন ও মো. আব্দুল হাইসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কমচারীরা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আজিজুল ইসলাম বলেন, ডোপ টেস্ট প্রজেক্ট চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রজেক্টের আওতায় আসবে সারাদেশ। এছাড়া অবকাঠামোর দিক থেকেও এগিয়েছে অধিদপ্তর। আর চারটি বিভাগীয় শহরে রাসায়নিক ফরেনসিকগার করা হচ্ছে।
Discussion about this post