ঢাকা: বিশ্বের সবার জন্য করোনা টিকা নিশ্চিত করতে এ পণ্যটি ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থ সামগ্রী’ ঘোষণার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ দাবি জানিয়ে বলেন, ২০২২ সালের আগস্টের মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউস গ্লোবাল কোভিড-১৯ শীর্ষক ভার্চুয়াল সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকা উৎপাদন ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে বৈশ্বিক সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাপী টিকা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলিকে ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থ সামগ্রী’ হিসেবে ঘোষণা করা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, টিকা লাভের সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্ষমতা রয়েছে এমন উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মাধ্যমে টিকার স্থানীয় উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিন ধাপ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রথমত: জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা, যন্ত্রপাতি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং সম্পদ বরাদ্দ করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে আমাদের নাগরিকদের বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবিকা সুরক্ষায় সহায়তা প্রদান করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ পুনরুদ্ধার করা। দ্বিতীয়ত: টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করা হচ্ছে যাতে উদ্ভাবন, কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত: জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং কম কার্বণ নিঃসরণের দিকে মনোনিবেশ করা হচ্ছে। প্রথমে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা নেট কর্মসূচির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নীতির দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে বলেন শেখ হাসিনা। কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ বরাদ্দ করা হয়েছে দরিদ্র, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীসহ ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন সুবিধাভোগীদের ১৬৬ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়েছে।দেশে কী পরিমাণ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫ মিলিয়নের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ লোককে টিকা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে ২০ মিলিয়ন মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা বিষয়ক ঊচ্চপর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু না করলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে পুরো অঞ্চল। এ সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।করোনা সংকটে প্রায় দুই বছর নাকাল গোটা বিশ্ব। কোটি প্রাণহানির ঘটানো মহামারির কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে উঠেছিল বিজ্ঞান তথা সভ্যতা। বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে পরিস্থিতি যখন কিছুটা স্বাভাবিক। তখন এর মধ্যেই নিউইয়র্কে বসেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন। মূল আয়োজনের ফাঁকে বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে আয়োজিত হয় হোয়াইট হাউস গ্লোবাল কোভিড-১৯ শীর্ষক ভার্চুয়াল সম্মেলন। বিশ্বনেতাদের মহামারি অবসানে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ঊচ্চপর্যায়ের এ অনলাইন বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে হাই-প্রোফাইল এ বৈঠকে যোগ দিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসাসহ বিশ্ব নেতারা। পরে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের সব চেষ্টার পরও সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক পরিস্থিতি প্রত্যাবাসন ইস্যুতে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সত্যিকারের উদ্যোগ প্রয়োজন জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের। গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়নহ ওআইসির প্রতিনিধিরা প্রত্যবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা তুলে ধরেন বৈঠকে। হোয়াইট হাউস আমন্ত্রিতদের জানিয়েছে, এ বছরের শেষের দিকে এবং ২০২২ সালের শুরুতে ফলো-আপ ইভেন্টগুলো অংশগ্রহণকারীদের তাদের প্রতিশ্রুতির জন্য দায়বদ্ধ রাখার উদ্দেশে আয়োজন করা হচ্ছে।
Discussion about this post