আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার চার মাস গড়িয়ে পাঁচ মাসে পড়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হয়। এর মধ্যেই আজ শনিবার ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ করে এ হামলা চালানো হয়। আজ দেশটির উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলেও হামলা শুরু করেছেন রুশ সেনারা শনিবার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল শুক্রবার থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক অঞ্চলের সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহরে ব্যাপক হামলা শুরু করেন রুশ সেনারা। এ শহর দুটি দখলে ব্যাপক গোলাবর্ষণের পাশাপাশি বিমান হামলাও জোরদার করা হয়েছে। সেখানে একটি রাসায়নিক কারখানা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ওই কারখানায় অনেক বেসামরিক লোকজন আটকে ছিলেন। শুক্রবার ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে তাদের সেনাদের পিছু হটতে নির্দেশ দেয়। রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে শহর ছাড়তে সেনাবাহিনীর সদস্যদের এ নির্দেশ দেওয়ার কথা জানায় ইউক্রেন সরকার। সেভেরোদোনেৎস্কের দখল নিতে কয়েক মাস ধরে তুমুল লড়াই চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর। দুই পক্ষের লড়াইয়ে শহরটির ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে নানা অবকাঠামো। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর করা চতুর্থ মাস পূর্তির দিনেই সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে পিছু হটার কথা বলল ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। এর আগে মে মাসে মারিউপোল বন্দর হারানোর পর ইউক্রেনের জন্য এটি সবচেয়ে বড় ধাক্কা। আজকের হামলা প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পরামর্শক মাইখাইলো পোডোলিয়াক টুইটারে বলেছেন, ‘রাতে ৪৮টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পুরো ইউক্রেনে নিক্ষেপ করেছে রুশ বাহিনী। তারা এখনো ইউক্রেনকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে আতঙ্ক সৃষ্টি ও মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন রুশ সেনারা।’ সর্বশেষ রুশ সেনাদের এ অগ্রগতি মস্কোকে লুহানস্কের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগেই রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল দখলে নেওয়ার জন্য তাঁর উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। লুহানস্কের দখল সম্পন্ন হলে রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য হলো লিসিচানস্কের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। লুহানস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ভিটালি কিসেলেভ রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেছেন, লিসিচানস্কের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে দেড় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। লুহানস্কের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, আজ রুশ সেনারা সেভেরোদোনেৎস্কের শিল্প এলাকায় হামলা করেছেন। এ ছাড়া লিসিচানস্ক শহরটিকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা শুরু করেছেন। সেখানে বিমান হামলার পাশাপাশি গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। অবশ্য আজত রাসায়নিক কারখানায় রুশ বাহিনীর হামলায় হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেননি তিনি। তবে হাইদাই বলেন, গত শুক্রবার পুলিশ কর্মকর্তা ও উদ্ধারকারীদের সহায়তায় লিসিচানস্ক থেকে ১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়। ইউক্রেনীয় ন্যাশনাল গার্ড ব্রিগেডের প্রেস অফিসার খারাতিন স্টারস্কি বলেন, সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। ইউক্রেনজুড়ে হামলা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, শুক্রবার রুশ সেনারা ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেন। কয়েকটি প্রদেশের গভর্নরের পক্ষ থেকেও তাঁদের এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানানো হয়েছে। অবশ্য রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। তবে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের অভিযোগ, রুশ সেনারা যুদ্ধাপরাধ করছেন। ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের লিভিভ অঞ্চলের গভর্নর ম্যাক্সিম কোজিটাস্কি বলেন, কৃষ্ণসাগর থেকে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইয়াভোরিভ ঘাঁটিতে নিক্ষেপ করা হয়। এর মধ্যে চারটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। দেশটির উত্তরের ঝাইতোমারের গভর্নর ভিতালি বুনেচেকো বলেন, সেখানকার একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। এতে এক সেনা নিহত হয়েছেন। ঝাইতোমারের একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে কমপক্ষে ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়। দক্ষিণের মাইকোলাইভের মেয়র আলেকজান্ডার সেনকেভিচ বলেন, পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র শহরে আঘাত হেনেছে। আরও অস্ত্র চায় ইউক্রেন শুক্রবার ইউক্রেনের পক্ষ থেকে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আরও অস্ত্র সরবরাহের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউক্রেন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, লুহানস্কের পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের আরও অস্ত্র প্রয়োজন। এদিকে সেভেরোদোনেৎস্কের দক্ষিণে হিরস্কে ও জোলতে শহরে রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে ইউক্রেনের সেনাদের পিছু হটতে হয়েছে। তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দনবাসে আরও বেশি ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা ইতালির এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গত ৯ মে পুতিন দনবাস দখলের কথা বলেন। ২৪ জুন পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কয়েকটি এলাকা থেকে সেনাদের পিছু হটা মানে যুদ্ধে হেরে যাওয়া নয়।’ চুক্তির জন্য চাপ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আজ বলেন, তাঁর আশঙ্কা, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য ইউক্রেন চাপের সম্মুখীন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, পুতিন ইউক্রেনে যাওয়ার পরিণতি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক বিপর্যয়।
Discussion about this post