আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ সকালে এশিয়ার বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম (মে মাসের জন্য) ৩ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৫ দশমিক ৩৭ ডলারে উঠেছে। এপ্রিল মাসের জন্য ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ১০ সেন্ট বেড়ে ৮১ দশমিক ১৪ ডলারে উঠেছে। ফলে নভেম্বরের পর তেলের দাম এখন সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এএনজেডের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তি। মূলত গত সপ্তাহে রাশিয়ার তেল পরিশোধনাগারে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার সূত্রে প্রতিষ্ঠানটি এ কথা বলেছে। গত শনিবার রাশিয়ার ক্রাসনাদারের স্ল্যাভিন্সক পরিশোধনাগারে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় কিছুক্ষণের জন্য আগুন লেগে যায়। এই পরিশোধনাগার বছরে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন তেল পরিশোধন করা হয়, যার দৈনিক সক্ষমতা ১ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল। রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ হামলায় বছরের প্রথম প্রান্তিকে রাশিয়ার তেল পরিশোধনের সক্ষমতা ৭ শতাংশ কমেছে।এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল রবিবার তিনি নিশ্চিত করেছেন, গাজার রাফা অঞ্চলে যে ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানেও অভিযান চালানো হবে। যদিও ইসরায়েলের মিত্ররা নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, সেটা হলে এই অঞ্চলের শান্তি নিশ্চিত করা ‘খুবই কঠিন’ হয়ে যাবে। এ সপ্তাহের বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, ফের কবে নাগাদ নীতি সুদহার হ্রাস করবে, সে বিষয়ে সেদিন আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। বিশ্লেষণকারী সংস্থা আইজির বাজার বিশ্লেষক টনি সিকামোর বলেন, সম্ভবত ফেডারেল রিজার্ভ এ মাসে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে; এরপর জুন মাসে তারা নীতি সুদহার কমাবে কি না, তা–ও এখন রীতিমতো টস করার মতো বিষয় হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কমলে চাহিদা বাড়বে; এতে তেলের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। শুক্রবার তেলের দাম কিছুটা কমলেও পুরো সপ্তাহের হিসাবে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই ক্রুড তেলের দাম উভয়ই ৪ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে সামগ্রিকভাবে তেলের দাম সীমার মধ্যেই ছিল; কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) তেলের চাহিদা বৃদ্ধির যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে তেলের দাম গত নভেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। আইইএ মূলত শিল্পায়িত দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে অনেক জাহাজ সেই পথ এড়িয়ে চলছে বলে তেলের চাহিদা বাড়ছে। এই বাস্তবতায় আইইএ গত নভেম্বরের পর এ নিয়ে মোট চারবার তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। এ ছাড়া এই প্রথম আইইএ চলতি বছর তেলের বাজারে সরবরাহ ঘাটতির ইঙ্গিত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি তেল পরিশোধনাগার অবশ্য সংস্কারের পর আবার উৎপাদনে এসেছে। ফলে দেশটিতে তেলের চাহিদা যতটা বেড়েছে, সরবরাহ তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে। গত শুক্রবার অর্থাৎ পশ্চিমা পৃথিবীতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত চলতি বছর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়েছে ১১ ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
Discussion about this post