আন্তজার্তিক ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধে তামিল বিদ্রোহীদের ওপর সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাকে আটকের জন্য সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের নিকট আবেদন জানিয়েছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। আল-জাজিরা জানায়, শনিবার (২৩ জুলাই) দক্ষিণ-আফ্রিকা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রুথ এন্ড জাস্টিস (আইটিজেপি) গোতাবায়ার বিরুদ্ধে ৬৩ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়। ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২৫ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ অবসানে প্রতিরক্ষা প্রধান থাকাকালীন জেনেভা কনভেশন চুক্তির মারাত্মক লঙ্ঘন করেছিলেন গোতাবায়া। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার ভাই গোতাবায়া মিলে তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হন। সরকারি বাহিনী ও তামিল বিদ্রোহী উভয় পক্ষই যুদ্ধ চলাকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ। আইটিজেপির মতে, সার্বজনীন জুরিসডিকশন অনুসারে সিঙ্গাপুরে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। গতকাল রবিবার (২৪জুলাই) আল-জাজিরার সঙ্গে টেলিফোনে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের সতত্য নিশ্চিত করেছেন আইটিজেপির নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন সুকা। ইয়াসমিন সুকা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে যার উত্তর তাকে দিতে হবে। আইন অনুসারে গৃহযুদ্ধের সময় গোতাবায়া রাজাপাকসে জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন করেছেন। কারণ তিনি গৃহযুদ্ধের সময় হত্যা, অমানুষিক নির্যাতন, ধষর্ণ, যৌন নির্যাতন, স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা, গভীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি এবং খাদ্য সংকটের মতো ঘটনার জন্য দায়ী।’ ‘‘২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দ্রুত জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তার উদ্দেশে ছিল শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী কর্তৃক তামিল বিদ্রোহীদের ওপর নির্যাতনের কোনো স্বাক্ষী না রাখা। সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের নিকট আমাদের আবেদন হলো প্রতিরক্ষা প্রধান থাকাকালে গোতাবায়ার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করা ও তাকে আটক করা ‘’ ২০১৯ সালে গোতাবায়া রাজাপাকসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক থাকার সময় গোতাবায়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলায় সহযোগিতা করেছিল আইটিজেপি। এর মধ্যে একটি মামলা ক্যালিফোর্নিয়া পাকিং লটে হয়েছিল। কিন্তু পরের বছর গোতাবায়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়। আর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সুরক্ষা দেওয়া হয়। আল-জাজিরার পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরে শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও গোতাবায়ার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও গৃহযুদ্ধ চলাকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক আগেই অস্বীকার করেছিলেন গোতাবায়া। আর সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের মুখপাত্রও গোতাবায়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। গত ১৩ জুলাই শ্রীলঙ্কার জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে সিঙ্গাপুর পালিয়ে যান গোতাবায়া। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, গোতাবায়া ব্যক্তিগত সফরের ভিসায় সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। বর্তমানে সিঙ্গাপুরেই অবস্থান করছেন তিনি। তার পরবর্তী গন্তব্যে সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট কোনো কিছু জানা যায়নি।
Discussion about this post