ঢাকা: বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার শিবনারায়ণ দাস আর নেই। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সেখানে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। শিবনারায়ণ এর আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শিবনারায়ণ দাসের জন্ম কুমিল্লায়। তার বাবা সতীশচন্দ্র দাস। তিনি কুমিল্লায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রীর নাম গীতশ্রী চৌধুরী এবং এক সন্তান অর্ণব আদিত্য দাস। ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন শিব নারায়ণ দাস। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এই লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১০৮ নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ন দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন। সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খঁচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারী দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনলেন, এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হল (বর্তমানে তিতুমীর হল)-এর ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হলো পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। শিবনারায়ণ দাস পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকলেন লাল বৃত্তের মাঝে। এভাবেই রচিত হলো ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’র পতাকা, যা কিছুদিন পর স্বীকৃত হয় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের নকশাকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
Discussion about this post