আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রাশিয়ার হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হয়েছেন। জাহাজে হাদিসসহ বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। বাকিরা সুস্থ আছেন। এখন বেঁচে যাওয়া সব বাংলাদেশি নাবিককে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনাটাই ‘মূল লক্ষ্য’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) পীযুষ দত্ত। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বিএসসির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পীযুষ। বিএসসি পরিচালক বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিজি শিপিংসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ পীযুষ দত্ত জানান, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন মাহমুদ সাব্বির এখন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছেন। বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ইউক্রেনের একটি সমুদ্রবন্দরে আটকা পড়া জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান নিহত হন। হামলায় জাহাজের দুই নারী নাবিকসহ বাকি ২৮ জন নাবিক বেঁচে গেছেন। তারা অক্ষত আছেন। ‘ওই ২৮ জনের সবাই এখনো জাহাজে আছেন। যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাদের তীরে বা অন্য কোনো বোটে স্থানান্তর করা যাবে না।’ বলেন পীযুষ। গত বুধবার রাতের এই হামলার পর আজ সকালে জাহাজের কয়েকজন নাবিকের পরিবারের সদস্যরা বন্দরনগরীতে বিএসসির প্রধান কার্যালয়ে ভিড় করেন। উল্লেখ্য, গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে যাত্রা করে তুরস্কের ইরেগলি হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। জাহাজটি বন্দরে পৌঁছানোর পরদিন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হয়। ইউক্রেন থেকে সিরামিক ক্লে নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল জাহাজটির জাহাজটি আটকে পড়ার পর শিপিং কর্পোরেশনের নির্বাহী পরিচালক পীযূষ দত্ত বলেছিলেন, ‘জাহাজটি ২৩ ফেব্রুয়ারি অলভিয়া বন্দর ছেড়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা শুরু হয়ে যায়। তখন আমরা জাহাজটিকে কোনো পণ্য না নিয়েই বন্দর ছেড়ে চলে আসতে বলি। কিন্তু যেখানে জাহাজটি নোঙ্গর করেছে সেখান থেকে মূল সাগরে আসতে অন্তত ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে এবং স্থানীয় পাইলট (পথনির্দেশক ) ছাড়া সেটি করা সম্ভব নয়। কিন্তু যুদ্ধাবস্থার কারণে স্থানীয় পাইলট পাওয়া যায়নি।’ ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিতে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ নামক জাহাজটির সক্ষমতার একটি জাহাজের অন্তত সাত ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানান পীযূষ। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুটি দেশই কৃষ্ণসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এখন ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার জল, স্থল ও আকাশপথে সামরিক অভিযানের কারণে কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজ চলাচলে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, অলভিয়া বন্দরের কাছে এই মূহুর্তে আরো ১৩টি জাহাজ আটকে আছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন নাবিকেরা। এরপর সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর পর স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে শিপিং কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা হয়।
Discussion about this post