জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ৯নং ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের পাহাড়িপটল গ্রামে গৃহবধূ কনিকা আক্তার চায়না হত্যা মামলার আসামিরা আজো গ্রেফতার হয়নি। মামলাটির প্রধান আসামি ওই গৃহবধূর স্বামী নুরুল ইসলাম লেমনসহ পাঁচজন আসামি ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তারা পলাতক অবস্থায় গ্রামের প্রভাবশালীদের মাধ্যমে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলাটির বাদীকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, মেলান্দহ উপজেলার পাহাড়িপটল গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম লেমন বছর সাতেক আগে পার্শবর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার চরলোটাবর গ্রামের মৃত ছোহরাব মন্ডলের মেয়ে কনিকা আক্তার চায়নাকে (২৬) বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছর পর সাত মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা চায়নাকে তালাক দিয়ে লেমন বিদেশে চলে যান। এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের হলে আপস মীমাংসার মাধ্যমে লেমন বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে পুনরায় চায়নাকে বিয়ে করে সংসার করতে রাজি হন। এরপর থেকে আলিফ নামের একশিশু সন্তান নিয়ে চায়না পাহাড়িপটল গ্রামে তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। গত ৩ মে চায়নার স্বামী লেমন ছুটি নিয়ে বিদেশ থেকে দেশে এসে নিজ বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানকে আলাদা কক্ষে রেখে অন্যকক্ষে থাকা শুরু করেন। নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ফের তুমুল ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। লেমন তার স্ত্রী চায়নাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেন। এর জের ধরে বিদেশ থেকে আসার তিনদিনের মাথায় গত ৬ মে রাত ১০টার দিকে লেমন তার নিজ ঘরে স্ত্রী চায়নাকে বেধড়ক মারধর করেন। নির্যাতনের বিষয়টি ওই রাতে চায়না ফোন করে তার বোন কল্পনাকে জানিয়েছিলেন। ফোন করার কারণে লেমন ওই রাতে চায়নার কাছ থেকে ফোনসেটটিও কেড়ে নেওয়ায় ওই রাতে স্বজনদের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারেননি চায়না। পরদিন ৭ মে সকালে স্বামীর বাড়ির রান্না ঘরে ধর্ণায় ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় চায়নার লাশ দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা মেলান্দহ থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করিয়ে লাশ পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে মেলান্দহ থানা পুলিশ। লাশের সুরতহালে ডান পায়ের হাটুর ওপরে ও নিচে এবং ডান হাতে কাটা জখমের দাগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় চায়নার স্বামী নুরুল ইসলাম লেমনকে প্রধান আসামিসহ পাঁচজনকে আসামি করে নিহত চায়নার বড়ভাই মনির হোসেন বাবু বাদী হয়ে ৭ মে মেলান্দহ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি চারজন আসামিরা হলেন- চায়নার শশুর আলফাজ উদ্দিন, শাশুড়ি নূরজাহান বেগম, ননদ আছমা বেগম ও চাচাত ভাসুর সামিউল ইসলাম। মামলার আরজিতে গৃহবধূ চায়নাকে শারীরিক নির্যাতন ও শাসরোধ করে হত্যার পর ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার লক্ষ্যে চায়নার লাশ রান্না ঘরের ধর্ণায় ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ করেছেন বাদী। মামলাটির বাদী নিহত চায়নার বড়ভাই মনির হোসেন বাবু অভিযোগ করে জনকণ্ঠকে বলেন, মামলাটির প্রধান আসামি চায়নার স্বামী নুরুল ইসলাম লেমনসহ অন্যান্য আসামিরা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। হত্যাকান্ডের প্রায় তিন সপ্তাহ হলেও পুলিশ মামলার একজন আসামিকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। লেমনের বাবা আসামি আলফাজ উদ্দিন এলাকায় খুবই ধূর্তবাজ প্রকৃতির লোক। পলাতক অবস্থায় থেকেও তিনি স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলাটির বাদীসহ চায়নার অন্যান্য স্বজনদের হুমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। মামলাটির সকল আসামিকে গ্রেফতার করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান চায়নার বড়ভাই মনির হোসেন বাবু। মামলাটির তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম ময়নুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Discussion about this post