ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ফটকের পাশে নতুন একাডেমিক বিল্ডিংয়ের সীমানা প্রাচীরটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। ভবনটির পেছনের অংশে অনেক জায়গায় দেয়াল উপরের গ্রিল ভেঙে গেছে, এমনকি দেয়ালের অনেকটা জায়গাজুড়ে ফাটলও দেখা দিয়েছে। ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা। জানা যায়, দুই বছর আগে নতুন একাডেমিক ভবনের এ সীমানা প্রাচীর ভেঙে এসির কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। এরপর কয়েকবার প্রাচীরের গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। কয়েক দিন আগেও চারজনকে একই সীমানা প্রাচীর দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সময় হাতেনাতে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সীমানা প্রাচীরের দেয়ালের উপরের অংশের রডের গ্রিল ভাঙা। দেয়ালের উপরের পিলারও ভেঙে পড়ে গেছে। ফলে দেয়াল টপকে যে কোনো বহিরাগত সহজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন। এদিকে সীমানা প্রাচীরের অনেকাংশে ফাটল ধরেছে। এমনকি দেয়ালের কিছুটা অংশ ভেঙে ফুটপাতে পড়ে আছে। ফলে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা ফুটপাত দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থী, পথচারী যে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার একমাত্র রাস্তার ফুটপাত এটি। চলাচলের প্রধান এ সড়কটিতে সর্বসাধারণের জন্য একপাশে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় সীমানা প্রাচীর ঘেষেই রয়েছে ফুটপাতটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, দুই-এক দিন আগেও বেশ কয়েকজন ছিঁচকে চুরকে ধরে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের দেখে মাদকাসক্ত বলেই মনে হয়েছিল। পরবর্তীতে কথা বলেও তাই বুঝা যায়। তাদের কাছে এক ধরনের ব্লেড থাকে যা দিয়ে খুব সহজেই দেয়াল কাটা যায়। অবশ্য সেদিন তারা কিছু চুরি করতে পারেনি। তাই তাদের পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রতিদিন সকালে সদরঘাটে বিভিন্ন স্থান থেকে লঞ্চ এসে ভিড়ে আর বিকালে ও রাতের দিকে ছেড়ে যায়। এই সময়টাতে ফুটপাতে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এই ফুটপাত ধরে যাওয়া একাধিক পথচারীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অনেকটা ভয় নিয়েই তারা এখানে দিয়ে চলাচল করেন। প্রায় সময়ই ফুটপাত ছেড়ে সড়ক দিয়েই যাতায়াত করেন বলে জানান তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৯ সালে এই ফুটপাতে থাকা চায়ের দোকানসহ রিকশার গ্যারেজ ও অন্য দোকানগুলো উচ্ছেদ করে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরঘেঁষা নতুন ভবনটি নিচ তলায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রী কমনরুম। রাস্তার মুখোমুখি কমনরুমের একপাশে উন্মুক্ত করিডোর ও সিঁড়িতে বসে ছাত্রীদের অবসরের অধিকাংশ সময় পার হয়। তবে এখন যেন সেই অবসরের সময়টাই গুঁটিয়ে নিতে হচ্ছে ছাত্রীদের। রুমের সামনে দেয়াল ঘেঁষে সদরঘাটগামী রাস্তার ফুটপাতে অংশটি যেন এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বখাটেদের আড্ডাখানা। যেখানে বসে ছাত্রীরা ক্লাসের ফাঁকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সেখানে তারা উত্তপ্ত হচ্ছে বখাটেদের শিশের আওয়াজে। এর কারণ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক মাস আগে রাস্তা ও ড্রেনের সংস্কার কাজ হওয়ার পরে ফুটপাতের উচ্চতা অনেকটা বৃদ্ধি পায়। যার দরুন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দেয়ালের উপর দিয়ে কমনরুমের একাংশ দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, সিঁড়ির ওই অংশটায় অনেক ছাত্রীরাই বসে তাদের অবসর কাটান, বই পড়েন। ক্যাম্পাসের এতো অধিক সংখ্যক ছাত্রীর তুলনায় কমনরুমের জায়গার পরিমাণ শোচনীয় হাওয়ায় ছাত্রীদের সংকলিত জায়গার মধ্যেই তাদের অবসর কাটাতে হয়। কিন্তু এ অবস্থায় যদি হেনস্তার শিকার হতে হয়, তাহলে ক্যাম্পাসে ছাত্রীরা কতটুকু নিরাপদ তা অনেকাংশেই সন্দিহান। সেই শিক্ষার্থীর পাশাপাশি আরও কয়েকজন এই একই সুরে তাল মেলান। ছাত্রী কমনরুমের বিষয়টি ছাত্রকল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামকে অবহিত করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী দপ্তরের কয়েকজনসহ স্থানটি পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময়ে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে স্থানটি সুরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত হলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সীমানা প্রাচীরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, নতুনভাবে আরও উঁচু করে সীমানা প্রাচীরটি তৈরি করা হবে। প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আগামী সপ্তাহে ফাইল রেডি করে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। আর এবার আরসিসি ঢালাই করে পিলার ও সীমানা প্রাচীরটি তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি ভাঙা থাকে ঠিক করে ফেলা হবে।
Discussion about this post