আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টায়ার নিকোলসকে হত্যার পর তথাকথিত স্করপিয়ন স্পেশাল ইউনিট ভেঙ্গে দিয়েছে মেমফিস পুলিশ বিভাগ। এক বিবৃতিতে মেমফিস পুলিশ বিভাগ বলেছে, ইউনিটটিকে সবার স্বার্থে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। স্করপিয়ন ৫০ সদস্যের একটি ইউনিট, যার লক্ষ্য নির্দিষ্ট এলাকায় অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনা। কিন্তু ভিডিওতে এর কর্মকর্তাদের ২৯ বছর নিকোলসকে ৭ জানুয়ারি থেকে মারতে দেখা যাওয়ায় এটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। নিকোলসের পরিবার একটি বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এটিকে ‘টায়ার নিকোলসের দুঃখজনক মৃত্যুর জন্য উপযুক্ত এবং সমানুপাতিক এবং মেমফিসের সব নাগরিকের জন্য একটি শালীন ও ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করা হয়েছে বিবৃতিতে। গাড়ি চুরি এবং গ্যাং-সম্পর্কিত অপরাধের মতো উচ্চ অপরাধের ওপর নজর রেখে ২০২১ সালের অক্টোবরে চালু করা হয়েছিল ইউনিটটি। ইউনিটের টাডাররিয়াস বিন, ডেমেট্রিয়াস হ্যালি, ডেসমন্ড মিলস জুনিয়র, এমিট মার্টিন তৃতীয় এবং জাস্টিন স্মিথ – এই পাঁচ কর্মকর্তাকে গত সপ্তাহে বরখাস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল এবং প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যা, উত্তেজনাপূর্ণ আক্রমণ, অপহরণ, সরকারি অসদাচরণ এবং সরকারি নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। জেল রেকর্ড অনুসারে এই পাঁচজনের মধ্যে চারজন জামিন পেয়েছেন। শুক্রবার সকালে তারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মার্টিন এবং মিলসের আইনজীবী বলেছেন যে তাদের মক্কেলরা দোষী নন। যে ইউনিটটি টায়ারকে হত্যা করেছিল তা স্থায়ীভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে,” একজন প্রতিবাদকারী মেমফিসে একটি মেগাফোনে চিৎকার করে এবং জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। বৃষ্টির মধ্যেও ১০০ জনের কম বিক্ষোভকারীর একটি দল মেমফিস পুলিশ সদর দপ্তরের সামনের চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন পুলিশ ব্যবস্থায় পরিবর্তনের দাবি জানাতে। তারা বলেছিলেন, মেমফিস এবং সারা দেশে কালো মানুষদের ওপর নৃশংসতার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়েছে। বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ক্যাসিও মন্টেজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের সংগঠকরা মেমফিসের পুলিশ প্রধান সিজে ডেভিস এবং শহরের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবেন, যতক্ষণ না দাবি পূরণ না হয়। এর পর বিভাগের অপরাধ ইউনিট সংস্কার করা হয়। চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে পুলিশের নির্যাতনের কারণে মারা যান ২৯ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ টায়ার নিকোলস। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার হিংসাত্মক সংঘর্ষের একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশের নির্যাতনের ভিডিওটি শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের ভিমিও সাইটে পোস্ট করা হয়েছিল। ভাইরাল হওয়া ফুটেজে দেখা গেছে কৃষ্ণাঙ্গ অফিসাররা ট্রাফিক সিগনালে থাকা একটি গাড়ির মধ্য থেকে নিকোলসকে টেনে বের করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মারধর করে। তিন মিনিট ধরে তার ওপর অত্যাচার চালানো হয়। গাড়ির চালকের আসন থেকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় নিকোলসকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘ধুর, আমি কিছু করিনি… আমি শুধু বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ পুলিশরা তাকে জোর করে মাটিতে শুইয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং তার পেটে টিজার গান দিয়ে হামলা করে তারপর তার মুখে মরিচের স্প্রে করে দেয়। এক অফিসার আরেক অফিসারকে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তাকে তাড়া করো, মাটিতে শুইয়ে দাও।’ তারপর তাকে ধস্তাধস্তি করে ফুটপাতে শুইয়ে দেওয়া হলে সে শান্তভাবে বলে, ‘ঠিক আছে, আমি মাটিতে আছি।’ একজন অফিসার চিৎকার করে গালি দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমার (গালি জাতীয় শব্দ) ভাঙার আগে হাত পিঠের পিছনে রাখ।’ এর পরে আরেক অফিসার চিৎকার করে বলেন, ‘আমি সেগুলি ভাঙ্গার আগে তোর হাত পিঠের পিছনে রাখ’। জবাবে নিকোলস উচ্চৈঃস্বরে বলে, ‘আপনারা এখন বেশি করে ফেলছেন। আমি শুধু বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছি। থামুন, আমি কিছু করছি না।’ এরপর নিকোলাস উঠে পালাতে গেলে অফিসাররা তাকে টেজার গান মারে এবং পাকড়াও করে ফেলে। তারপর সবাই মিলে তাকে লাথি, কিল, ঘুষি মারতে থাকে। এমনকি একজন রড দিয়েও পেটাতে দেখা গেছে। মারধরের পরে যখন নিকোলস আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েন তখন অফিসাররা প্রায় কয়েক মিনিটের জন্য হাওয়া হয়ে যান। আহত হয়ে তিন দিন পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নিকোলস।
Discussion about this post