ঢাকা : দেশের বাজারে একযোগে বোতলজাত এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। তেলের অভাবে বাজারে তৈরি হয়েছে সংকট। তবে সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে রাইস ব্র্যান অয়েল, সূর্য্যমুখী বা সরিষার তেল থাকলেও এসব তেল বিকল্প হিসেবে নিচ্ছেন না কেউই। কিছু মানুষ বাধ্য হয়ে সরিষা তেল বেছে নিলেও বাজারে নতুন দামের সয়াবিনের চেয়ে পুরাতন দামের রাইস ব্র্যান তেলের দাম কম হলেও ফিরেও তাকাচ্ছেন না ক্রেতারা। খোঁজ করছেন বেশি দামের সয়াবিনেরই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুসারে, রাইস ব্র্যান অয়েল সিরাম কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং এতে বিদ্যমান উপকারী উপাদান রক্তের টিজির পরিমাণ কমানোতে বেশ কার্যকর। পাশাপাশি হার্টের আর্টারিতে চর্বি জমতে না দেয়ার কাজটিও সুনিপুণভাবে করে থাকে এছাড়া সূর্য্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল হতে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে বলেও জানা গেছে।অপরদিকে সয়াবিন তেলের রয়েছে নানা ক্ষতিকর দিক। শরীরের স্থূলতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সয়াবিন তেল। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দৈনিক ৫ চা চামচের বেশি সয়াবিন তেল খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া অতিরিক্ত সয়াবিন তেলজাতীয় খাবার গ্রহণ করলে লিভারে কোলেস্টেরল জমে যায়। লিভার কোলেস্টেরল থেকে লিভার সিরোসিস হতে পারে। এত অপকারিতার পরও ক্রেতাদের বাজারের তালিকায় সয়াবিনের প্রাধান্য। জায়গা দখল করতে পারছে না উপকারী সরিষা, সূর্য্যমুখী বা রাইস ব্র্যান অয়েল। রাজধানীর পাইকারি, খুচরা এবং এবং আমদানি পণ্যের বাজার মৌলভীবাজারসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। সরজমিনে মৌলভীবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোনো দোকানে সয়াবিন তেল নেই। মাঝেমধ্যে সয়াবিনের খোঁজে ক্রেতা এলেও তাদের ঘুরে ঘুরেই সময় পার করতে হচ্ছে। কোনো দোকানেই মিলছে না তেল। অধিকাংশ দোকানে অন্যান্য ভোজ্যতেল থাকলেও সেগুলো ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে না। ক্রেতারাও আকৃষ্ট হচ্ছেন না এসব তেলের প্রতি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরাতন দামের রাইস ব্র্যান তেল বাজারে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে, যা নতুন দামের সয়াবিন তেলের থেকেও কম দাম। তবুও ক্রেতাদের এই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সানফ্লাওয়ার বা সূর্য্যমুখী তেলের আমদানিকারক হাজী মতিন এ্যান্ড সন্সের মালিক বলেন, ‘সয়াবিন তেলের নতুন রেটের মাল এখনও বাজারে আসেনি। পুরানত যে মাল ছিল সেগুলো তো অনেক আগেই শেষ করে দিয়েছি। এখন কবে নাগাদ তেল দেবে এটা আমরাও বলতে পারি না। ফ্যাক্টরি থেকে তেল দিলেই আমরা বাজারে ছাড়তে পারব। তারপর সংকট কেটে যাবে। আশা করি খুব শীঘ্রই নতুন তেল বাজারে ঢুকবে।’ এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই মার্কেটে যারা তেলের ব্যবসা করেন তারা তেলের অভাবে এখনও দোকানই খোলেনি। বাজারেও আসে না। এসেই বা কী করবে? দোকান খুললেই খরচ।’ সয়াবিন সংকটের মধ্যে বাজারে বিকল্প অন্যান্য তেলের চাহিদা বেড়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাইস ব্র্যান বলেন সূর্যমুখী বলেন, বাঙালিরা সয়াবিন বাদে কোনো কিছুই চেনে না। অথচ দেখেন পুরাতন রেটের রাইস ব্র্যানের তেল বাজারে এভেইলেবল। বাজারে নতুন দামের সয়াবিনের যে দাম তার থেকে রাইস ব্র্যানের পুরাতন তেলের দাম কম, তবুও মানুষ এই তেল কিনছেন না। সবাই সয়াবিনের খোঁজ করছেন। বাজারে বর্তমানে রাইস ব্র্যানের পুরাতন রেটের ৫ লিটারের তেলের বোতলের দাম ৯১০ টাকা আর নতুন দামের সয়াবিনের ৫ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা। যদিও রাইস ব্র্যানের নতুন তেলের দাম আরও বেশি, পুরাতন তেল রয়েছে, দাম কম হলেও কেউই কিনছেন না।’
Discussion about this post