নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১২ বছর বয়সী শিশু সাদিয়া খাতুন ও ১৮ বছর বয়সী কাউছার হোসেনকে হারিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন শাজাহান-হেলেনা দম্পতি। এই দর্ঘটনায় দুই ভাই-বোনসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এসময় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের গাজী অটো রাইসমিলের সামনে এই দূর্ঘটনা ঘটে । বড় হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি ভুঁইয়া জানান, শনিবার সকাল দশটার দিকে স্থানীয়রা বাস টার্মিনাল থেকে সিয়াম পরিবহনের একটি বাসে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে পাইকোড়দৌল গ্রামের শাজাহান হোসেনের স্ত্রী টাঙ্গাইল তার মামার বাড়ির উদেশ্য রওনা হন। পথে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের গাজী অটো রাইসমিলের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা ন্যাশনাল পরিবহনের একটি বাসের সাথে তাদের বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই ১২ বছর বয়সী শিশু সাদিয়া খাতুন ও ১৮ বছর বয়সী কাওছার হোসেন মারা যায়। কিন্তু এঘটনার তাদের মা অক্ষত থাকে। সাদিয়া পাইকোড়দৌল উচ্চ বিদ্যালয়ে আষ্টম শ্রেণীতে পাড়াশোনা করতো। আর কাওছার দিয়ারভিটা টেননিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইন্টারমিডিয়েডের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। ছেলে মেয়েদের হারিয়ে তাদের বাবা মা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। এ ঘটনায় এলাকার মাঝে শোকাবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই সন্তান নিয়ে কৃষক দম্পতির বেশ প্রাণবন্ত সংসার ছিল। ছেলে মেয়ে হারিয়ে পরিবারটা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেল। এ শোকের শান্তনা দেবার ভাষা আমাদের জানা নেই। দুজনই শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, দুই ছেলে মেয়ে নিহত হবার ঘটনাটি খুবই মার্মান্তিক। জেলা প্রশাসন থেকে সাধ্যমতো তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হবে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহী রেঞ্জের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্র্যাভেলসের বাসের সঙ্গে নাটোর থেকে সিরাজগঞ্জগামী সিয়াম পরিবহনের বাসের সংঘর্ষ হয়। এরপর সিয়াম পরিবহনের বাসটি গাজী অটো রাইসমিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, নাটোরের লালপুরের মোহনা আক্তার মিলি, সদরের পাইকারদৌল গ্রামের সাদিয়া পারভিন, কাওছার আলী ও আলমগীর হোসেন, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার গ্রামের জলিল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মশিউর রহমান ও মাগুরার মিজানুর রহমান। নিহতদের মধ্যে ১২ বছর বয়সী সাদিয়া ও ১৮ বছর বয়সী কাওছার দুই ভাই-বোন। সিয়াম পরিবহন থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মা ওই বাসেই ছিলেন তবে তিনি অক্ষত আছেন। বাকি চারজনের মরদেহ ন্যাশনাল ট্র্যাভেলসের বাস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
Discussion about this post