ঢাকা: আগামী সোমবার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত এবং দ্বীপের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে ৬ মাসের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে নিঝুমদ্বীপ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না-এই মর্মে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর জন্য রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রুলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বনসংরক্ষক এবং জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আগামী ৬ মাসের মধ্যে উক্ত সীমানা নির্ধারণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব মানবাধিকার কর্মী এবং ফটোজার্নালিস্ট রফিক উদ্দিন এনায়েত এর পক্ষে জনস্বার্থে রিট মামলাটি দায়ের করেন।রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এম গোলাম সারোয়ার। মামলার বিবরণে বলা হয় নিঝুম দ্বীপ একটি ছোট দ্বীপ, যেটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এটি চল্লিশের দশকে নোয়াখালী জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠে। ১৯৭৪ সালে বন বিভাগ এই চরটিতে বনায়ন শুরু করে। পরবর্তীতে, চরটির প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য বিবেচনায় সরকার এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে বন আইন, ১৯২৭ এর ২০ ধারায় সরকার পুরো নিঝুম দ্বীপকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে। ফলে আইনানুযায়ী সংরক্ষিত বন নিঝুম দ্বীপে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ, কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বন নিয়ে ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে। যেটি সম্পূর্ণ বেআইনি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় দুটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু অধ্যাবদি সংরক্ষিত বনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। সেই সুযোগে স্থানীয় অসাধু ভূমিখেকোরা নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বনের জমি অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন ধরনের কাঠামো নির্মাণ করে যাচ্ছে। ফলে, নিঝুম দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকার ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী সংরক্ষিত নিঝুম দ্বীপকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর থেকে ইউনিয়ন পরিষদকে আলাদা করে পরিষদের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য বাদী সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুরোধ করার পরেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বাদীপক্ষ ইতিপূর্বে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। হাইকোর্ট নিঝুম দ্বীপ রক্ষায় একাধিক রুল জারি এবং নির্দেশনা দেন। কিন্তু এরই মধ্যে, নির্বাচন কমিশন ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সীমানা নির্ধারণ বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। মামলায় ২০১২ সালের গেজেট অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপের সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত রাখতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল, তবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো আদেশ হয়নি। রিটে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়পর সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ ১৪ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
Discussion about this post