ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মামলা নথিভুক্ত করতে একই ঘটনায় এক কিশোর ও এক তরুণীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেঁসে গেছেন ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশের এক এএসআই। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করেছেন পুলিশ সুপার। এদিকে, অবস্থা বেগতিক দেখে কিশোরের পরিবারের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন পুলিশের এএসআই কামরুল হাসান। তবে তরুণীর পরিবার থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কিশোরের পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়। কিশোরের পরিবার প্রথমে ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করেনি। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তারা। জানা যায়, ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ বানিয়ে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরের সঙ্গে প্রতিবেশী ১৮ বছরের তরুণীর জোরপূর্বক বিয়ে এবং বিয়ে-পরবর্তী জটিলতা নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আলদিয়ার আলগী গ্রামের দুই পরিবার দ্বারস্ত হয়েছিল থানা পুলিশের। ওই সময় মামলা নথিভুক্ত করার নামে কিশোর বিজয়ের পরিবারের কাছ থেকে ঈশ্বরগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামরুল হাসান কয়েক দফায় ২৪ হাজার টাকা ‘ঘুষ’ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া তরুণীর পরিবারের কাছ থেকেও নেয়া হয় ২৭ হাজার টাকা।এ ঘটনার পর এএসআই কামরুল হাসানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হলেও তিনি ছুটিতে থাকায় এখনও সেখানে সংযুক্ত হননি। গত শনিবার সন্ধ্যায় উচাখিলা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সদস্য মানিকের মাধ্যমে কিশোরের বাড়িতে ১৫ হাজার টাকা ফেরত পাঠান টাকা এএসআই কামরুল। টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিজয়ের নানা কলিম উদ্দিন। টাকা হস্তান্তরের বিষয়টি গ্রাম পুলিশের সদস্য মানিক অস্বীকার করলেও বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন এএসআই কামরুল হাসান।তিনি বলেন, ওসির নির্দেশে গ্রাম পুলিশ মানিকের মাধ্যমে টাকা ফেরত পাঠানো হয়। ১৫ হাজার টাকাই নেওয়া হয়েছিল। এর বেশি নেওয়া হয়নি। প্রথমে পরিবারটি টাকা নিতে ভয় পেলেও তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলার পর তারা টাকা নেন। তবে তরুণীর পরিবারের টাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তরুণীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, তার কাছ থেকে মামলার জন্য ২৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। দ্রুত আসামি ধরার কথা ছিল। কিন্তু মামলা হলেও আর কোনো অগ্রগতি নেই। সে কারণে রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) থানায় এএসআই কামরুলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ছুটিতে থাকায় পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।তবে মোবাইল ফোনে দ্রুত অ্যাকশন হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। নুরুল ইসলাম আরও জানান, এই ঘটনায় তার সব শেষ হয়ে গেছে। মামলা করতে গিয়ে তার ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করতে হয়েছে। তারপরও মেয়েকে নিয়ে জটিলতার অবসান না হলে এলাকাছাড়া হবে বলেও জানান তিনি।ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল কাদের মিয়া বলেন, এএসআই কামরুল পাঁচ দিনের ছুটিতে রয়েছেন। ছুটি শেষে থানায় আসলেই তাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হবে। তবে সে থানায় না আসা পর্যন্ত অভিযোগ ও টাকা ফেরত বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
Discussion about this post