ঢাকা : সরকারের নেওয়া বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে বলে আবারও অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগি করে যারা লুটপাট করেছে তাদেরই উন্নতি হয়েছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একটা লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও আজকের বাংলাদেশ এবং চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্রব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিকের কোনো উন্নতি হয়নি, উন্নতি হয়েছে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগি করে লুটপাট করছে তাদের।সাধারণ মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। যারা টিসিবির ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় ন্যায্য মূল্যে পণ্য কেনার জন্য তাদের কোনো উন্নতি হয়নি।’ ‘আমার গ্রামের কৃষকের পণ্যের দাম বাড়েনি। শ্রমিক ভাইদের মজুরি বাড়েনি, তার কোনো উন্নতি হয়নি। যে শিক্ষক স্বল্প বেতনে চাকরি করেন তার কোনো উন্নতি হয়নি’—যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একটা লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই লুটপাটের স্বর্গরাজ্য আজকের নতুন না, এটা আওয়ামী লীগের কেমিস্ট্রির মধ্যেই আছে। যখনই তারা ক্ষমতায় যায়, তখনই তারা লুটপাট করে।’ ‘সেজন্য মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী শেখ মুজিবুর রহমানের সময় বলেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামটা পরিবর্তন করে দিয়ে নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি রাখো। আজকেও একই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা সবকিছু ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। সেখান থেকে দেশকে টেনে তুললেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়ে একটা মুক্ত সমাজ নির্মাণের আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য তারপরও আমরা সেটা রক্ষা করতে পারিনি। বাংলাদেশের যারা শত্রু তারা তাকে ধ্বংস করেছে। পরবর্তীতে আবার দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটাও আমরা রক্ষা করতে পারিনি।’ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে ফখরুল বলেন, ‘অথচ মন্ত্রীরা বলছেন এখনও নাকি দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে, আয় বেড়েছে। অর্থনীতিতে প্রকৃত আয় বলে একটা কথা আছে সেই প্রকৃত আয় মানুষের একটুও বাড়েনি বরং কমেছে। কালকে সিপিডি একটা প্রেস কনফারেন্স করেছে, সেখানে বলেছে সরকার মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়েছে।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে কোনোদিন ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। পরবর্তীকালে প্রত্যেকটি নির্বাচনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে এই দল ক্ষমতায় এসেছে।’ ‘আর আপনারা (আওয়ামী লীগ), মনে আছ ২০০৬ সালে যখন ১/১১ অবৈধ সরকার এসেছিল তখন বলেছিলেন এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। তখনই বলে দিয়েছিলেন, তাদের সব কাজ সেটা বৈধ অথবা অবৈধ আমরা সব ক্ষমতায় আসলে বৈধতা দেব। পরবর্তীতে সেই বৈধতা দিয়েছেন।’ দেশ ও দেশের মানুষকে ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।
Discussion about this post