তালুকদার লাভলী: ১৯৬১ সালের ১৯ ডিসেম্বর। এক শুভক্ষণে পৃথিবীর আলো দেখতে পান অধ্যাপক আহমেদ রেজা। বাবা আলহাজ আহমেদ ইউনুস ও মা হাসিনা বানুর কোল আলো করে যখন এ শিশুটি আসে তখন থেকেই তার উপস্থিতি আশীর্বাদ হয়ে ওঠে পরিবারের জন্য। শ্যামল-সুন্দর শিশুটির শৈশব থেকেই ছিল অপার মেধা, স্নিগ্ধতা, আর সৃজনশীলতার প্রকাশ। বাবা-মা বিশ্বাস করতেন তাদের এই সন্তান একদিন পৃথিবীর আলোকে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে। শৈশব থেকেই আহমেদ রেজার মনোযোগ ছিল শিল্প-সাহিত্যে। আবৃত্তি, গান আর সৃজনশীলতার প্রতি ছিল তার গভীর আকর্ষণ। বাবার উৎসাহে তিনি রেডিও ও টেলিভিশনের জগতে প্রবেশ করেন অল্প বয়সেই। তার অসাধারণ দক্ষতা আর মেধা সেই সময় থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শিক্ষাজীবনে আহমেদ রেজা ছিলেন অতুলনীয়। তিনি ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তার পেশাগত জীবন। শিক্ষার প্রতি অগাধ ভালোবাসায় ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নে (গঅ রহ ঊহমষরংয ঝঃঁফরবং)) মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বিশেষত্ব ছিল আধুনিক ইংরেজি সাহিত্য, ভাষাবিজ্ঞান, শৈলীগত বিশ্লেষণ, পাঠ ভাষাবিজ্ঞান, প্রাগম্যাটিকস এবং অনুবাদশাস্ত্র। অধ্যাপক আহমেদ রেজার জীবন বহুমুখী প্রতিভার এক নিখুঁত উদাহরণ। তিনি শুধু একজন শিক্ষাবিদই নন বরং একজন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তার আবৃত্তি, গান এবং সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তিনি বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি তার ছাত্রদের শুধু জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেননি বরং তাদের মধ্যে সৃজনশীল চিন্তার বীজ বপন করেছেন। তার রচিত এবং অনুদিত অনেক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গান। তার অনুবাদ করা গ্রন্থের মধ্যে আছে ড. ফসটাস, ইবসেনের নাটক এ ডলস হাউস, কৃষ্ণবিবর, এবং সোফোক্লিসের অ্যান্টিগোনে। এগুলো শুধু জনপ্রিয়ই নয় বেস্টসেলারের তকমা পেয়েছেন। বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি নিয়মিত প্রবন্ধ রচনা, গ্রন্থনা এবং বিখ্যাত মনীষীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে শ্রোতা ও দর্শকদের মুগ্ধ করে আসছেন। অধ্যাপক রেজা বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিভিন্ন সৃজনশীল সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীলতার পথে অনুপ্রাণিত করা এবং তাদের প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করা তার অন্যতম লক্ষ্য। তার জীবন এক আলোর দিশারি। তিনি যেমন নিজে আলোকিত তার সৃজনশীলতার আলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তিনি চারপাশেও ছড়িয়ে দিয়েছেন মেধা, জ্ঞান আর সৃজনশীলতার উজ্জ্বল আভা। আমরা তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। তার জন্মদিন ১৯ ডিসেম্বর প্রতিবার ফিরে আসুক আনন্দ আর শুভেচ্ছার বার্তা নিয়ে। শুভ জন্মদিন, অধ্যাপক আহমেদ রেজা।
Discussion about this post