সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: হাতেনাতে পরকীয়ার সম্পর্ক ধরা পড়ায় স্ত্রী সুমা আক্তারকে (১৯) লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে ও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন অটোরিকশা চালক স্বামী রহমত আলী (২৫)। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রহমত আলী জানায়, সুমা আক্তার স্বামী পরিত্যক্তা ছিলেন। ৯ মাস আগে চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় তারা চাকরি করা অবস্থায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করেন। বিয়ের ২/৩ মাস পরে তারা দুইজন চট্টগ্রামের পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে সুনামগঞ্জ শহরের নবীনগর এলাকায় মুকুল মাস্টারের কলোনিতে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার পাতেন। সুনামগঞ্জে এসে রহমত আলী অটোরিকশা চালিয়ে আয় রোজগার করেন। সুনামগঞ্জে আসার পর থেকে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই একে অন্যকে পরকীয়া জড়িত বলে সন্দেহ অবিশ্বাস করেন। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রী প্রতিরাতে ঝগড়াঝাটি করতেন। পরে সোমা আক্তারের মায়ের মধ্যস্থতায় তারা আবারও সংসার শুরু করেন। ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় রহমত আলী অটোরিকশা চালিয়ে বাসায় এসে দেখেন স্ত্রী ও অন্য নারী মিলে একজন যুবকের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত। এ সময় রহমত আলীকে দেখে ওই যুবক পালিয়ে যান। এঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রহমত আলী সোমা আক্তারকে রাত সাড়ে ১১ টায় খুন করার উদ্দেশ্য বাসা থেকে খালার বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি ইজিবাইকে সদর উপজেলার কোরবান নগর ইউনিয়নের হালুয়ারঘাট এলাকায় সুরমা নদীর তীরে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে অটোরিকশা চালককে ভাড়ার টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়। পরে সোমা ও রহমত আলী একসঙ্গে হেঁটে নদীর তীরে যায়। হেঁটে যাওয়ার এক পর্যায়ে রহমত আলী সোমাকে সামনে দিয়ে সে পেছনে পড়ে যায়। এসময় পেছন থেকে সোমাকে লোহার শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। চিৎকার দিয়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করলে সে সোমা আক্তারের মুখে কাপড় গুঁজে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। সোমা আক্তারের মৃতদেহ কাঁধে করে একটি ঝুপঝাড়ে ফেলে রাখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে রাতে খন্দকার হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সোমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। এঘটনায় সোমা আক্তারের মা শাহেনা আক্তার বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় রহমত আলীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত রহমত আলীর প্রথম পক্ষের ঘরে এক স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস বলেন, পরকীয়া সম্পর্ক, সন্দেহ অবিশ্বাস ও পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ জড়িত রহমত আলীকে গ্রেফতার করে। মূলত পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে রহমত আলী। তিনি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করেছেন। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রহমত আলীকে রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।
Discussion about this post