আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদে নববীর সেবক শায়খ আগা আবদুহু আলি ইদরিস ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। গত সোমবার মদিনায় তাঁর মৃত্যু হয় এবং মাগরিবের নামাজের পর মসজিদে নববীতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের ধর্মবিষয়ক পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস। শায়খ আস-সুদাইস তাঁর জন্য মহান আল্লাহর কাছে পরকালে উঁচু মর্যাদার জন্য দোয়া করেন। আগা আবদুহু ইদরিস ছিলেন পবিত্র রওজা শরিফের প্রবীণ সেবকদের একজন। তাঁর মৃত্যুতে এখন মাত্র দুজন আগা রয়েছেন। একজনের বয়স ১০০ বছরের বেশি এবং অন্যজনের বয়স ৮০ বছর অতিক্রম করেছে। জানা যায়, ‘আগা’ অনারব শব্দ। শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন ‘আগাওয়াত’। ফারসি, কুর্দি ও তুর্কি ভাষায় এর ব্যবহার রয়েছে। বাড়ি বা পরিবারের প্রধান কিংবা প্রধান সেবকসহ এর নানা অর্থ রয়েছে। তবে মক্কা ও মদিনায় বিশেষ অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যাঁরা পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোর সুরক্ষাসেবায় নিযুক্ত থাকেন তাঁদের আগা বলা হয়। মূলত আইয়ুবি যুগ থেকে (১১৬১ খ্রি. মোতাবেক ৫৫৭ হি.) পবিত্র রওজা শরিফের সুরক্ষায় আগাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাঁদের বেশির ভাগ হাবশা থেকে এলেও কেউ কেউ ভারতীয় উপমহাদেশ ও ট্রান্স-অক্সানিয়া অর্থাৎ নিম্নমধ্য এশিয়া অঞ্চল থেকে এসেছেন। মসজদে নববীতে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র হুজুরাসহ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁদের মূল দায়িত্ব। ইসলামী যুগে তাঁরা সমাজে উঁচু মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। হারামাইন এলাকায় কাজ করার সুবাদে মানুষ তাঁদের খুবই সম্মান করত। বাদশাহ, আমিরসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের ওঠাবসা ছিল। ১৩৪৬ হিজরিতে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ আগাদের নিজ নিজ দায়িত্বে বহাল রাখেন। হাজরে আসওয়াদ, রুকন, মাকামে ইবরাহিমে সুগন্ধি লাগানো, পবিত্র কাবাঘর ধোয়া, পবিত্র রওজা শরিফ পরিচ্ছন্ন রাখাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব তাঁরা পালন করেন। ১৯৭৮ সালে মোতাবেক ১৩৯৯ হিজরিতে সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ বিন বাজ (রহ.) তাদের আগমন বন্ধ করতে বাদশাহ ফাহাদকে চিঠি লিখেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, হাবশার অনেক পরিবারের মধ্যে সন্তানদের নপুংসক করার প্রচলন রয়েছে। সন্তানদের তারা মদিনায় কাজের জন্য পাঠাত। মানুষের মর্যাদার পরিপন্থী হওয়ায় ইসলামে এ ধরনের কাজ নিষিদ্ধ। এক সময় তাদের সংখ্যা শতাধিক হলেও এবং বর্তমানে মাত্র দুই জন আগা জীবিত আছেন। ভবিষ্যতে তাদের সব দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে পালন করা হবে।
Discussion about this post