আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে চীন জানিয়েছে, ইসরায়েল ও গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত থামানোর একমাত্র উপায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। রবিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ নিয়ে টেলিফোনে আলোচনা করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সে আলোচনায় এই ইস্যুতে নিজ দেশের অবস্থান স্পষ্ট করে ওয়াং ই বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার ফলাফল হলো আজকের এই যুদ্ধ। দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক অবিচার করা হয়েছে— যত শিগগির সম্ভব তার সমাপ্তি টানা প্রয়োজন।’ ‘বেইজিং সবসময় শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে এবং এ কারণেই ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনগণের জাতীয় অধিকার রক্ষার আন্দোলনের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে,’ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ানকে বলেন ওয়াং ই। একই দিন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গেও টেলিফোন বৈঠক করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই বৈঠকে তিনি বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, মানবিক সহায়তা করিডোর খোলা এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্য সংলাপ শুরু হওয়া প্রয়োজন। ইসরায়েলের নাম উল্লেখ না করে সেই টেলিফোন বৈঠকে ওয়াং ই বলেন, ‘সব পক্ষেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে তা অবশ্যই এই অধিকারের প্রয়োগ হতে হবে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে।’ ‘এবং আত্মরক্ষার অধিকারের নামে নিরপরাধ বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।’ প্রসঙ্গত, প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস এবং সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইসরায়েলের দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ওই ভূখণ্ডে প্রবেশ করে শত শত সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা। হামাসের হামলায় প্রথম দিনই ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন কয়েকশ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। এছাড়াও দেড় শতাধিক মানুষকে এদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে হামাস। এই জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে— তা এখনও অজানা। প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্য ও প্রস্তুতির অভাবে হামলার শুরুর দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধের ময়দানে নামে ইসরায়েল এবং প্রথম দিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছিল আইডিএফের বিমান বাহিনী। দুই পক্ষের যুদ্ধে গাজায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৭০ জন নিহত এবং ৯ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের প্রতিরক্ষা বাহিনী। আর আইডিএফের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত হামাসের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। ১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ চলছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে। চীন বরাবরই আল আকসা অঞ্চলে দ্বিরাষ্ট্র তত্ত্বের (টু স্টেটস থিওরি) পক্ষে। একই তত্ত্বে আস্থাশীল যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এবারের যুদ্ধে হামাসকে নিন্দা না জানানোয় চীনের সমালোচনা করেছে ইসরায়েল ও যুক্তারষ্ট্র।
Discussion about this post