আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছেন। মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী ওই প্লেনে প্রিগোজিনসহ ১০ আরোহী ছিলেন। তারা সবাই মারা গেছেন। আর প্রিগোজিনের এমন আকস্মিক মৃত্যুর জন্য অনেকই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে। কারণ মাত্র দুই মাস আগে তার সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন প্রিগোজিন। গত ২৩ জুন প্রায় ২৫ হাজার সেনা নিয়ে ইউক্রেন থেকে রোস্তোভ-দি-অন প্রদেশ দিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন প্রিগোজিন। ওই সময় নিজ সেনাদের রাজধানী মস্কোর দিকে পাঠান তিনি। প্রিগোজিনের এ বিদ্রোহের পর বেজায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন পুতিন। তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন তিনি। এছাড়া প্রিগোজিনের এ বিদ্রোহকে ‘পেছন থেকে ছুরি মারার’ সঙ্গে মিলিয়েছিলেন তিনি। সেই বিদ্রোহের প্রতিশোধ নিতে প্রিগোজিনকে পুতিন দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার কড়া সমালোচক বিল ব্রাউডার। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই এই বিমান বিধ্বস্তের পেছনে রয়েছেন পুতিন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘পুতিন এমন একজন মানুষ যিনি কখনো কিছু ভুলেন না, ক্ষমা করেন না। প্রিগোজিন মূলত পুতিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাই করেছিলেন। পুতিনকে যখন আপনি দুর্বল হিসেবে প্রকাশ করেন তখন এমনটিই হয়।’ এদিকে বিদ্রোহের দিনই পুতিনের সঙ্গে আপোষ করেন প্রিগোজিন। ওইদিন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থামিয়ে দেন এবং চুক্তি করেন নিজ সেনাদের নিয়ে বেলারুশে চলে যাবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন, প্রিগোজিন বিদ্রোহ থামানোর চুক্তি করে নিজের জন্য স্পেশাল ডেথ ওয়ারেন্টে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি আরও বলেছেন, প্রিগোজিনকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টা দেখিয়েছে, পুতিন বিশ্বাসঘাতকতার জন্য কাউকে ক্ষমা করেন না। বিদ্রোহ থামানোর চুক্তি করার পর প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলো তুলে দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল পুতিন তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস বলেছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে সময় নিয়ে প্রতিশোধ নেবেন। নাম গোপন রাখার শর্তে কয়েকটি সূত্র রুশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, প্রিগোজিনের প্লেনটি লক্ষ্য করে এক বা একাধিক সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তবে এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওটি বিচার-বিশ্লেষণ করে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী ও এরোস্পেস রিপোর্টার মাইলস ও ব্রায়েন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘প্লেনটি ঘুরতে ঘুরতে নিচে নেমে এসেছে। আর এটি থেকে অনেক ধোঁয়া বের হচ্ছিল। এর অর্থ প্লেনটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। এছাড়া মনে হচ্ছিল কয়েকটি অংশ, অ্যারোডাইনামিক সারফেস প্লেনটিতে ছিল না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এ ধরনের বিমান খুব বড় ধরনের কোনো কারণ ছাড়া এভাবে আকাশ থেকে পড়ে যায় না। এভাবে এই বিমানটি আছড়ে পড়ার কারণ হতে পারে— ভেতরে বা বাইরে বিস্ফোরণ। মানে প্লেনের ভেতরে কোনো বিস্ফোরণ হতে পারে অথবা প্লেনটিতে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে পারে।’ প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে পুরো বিশ্বে হৈচৈ পড়ে গেলেও এখনো এ নিয়ে একটি কথাও বলেননি পুতিন।
Discussion about this post