স্পোর্টস ডেস্ক: ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’। কালীপ্রসন্ন ঘোষের ‘পারিব না’ কবিতার একটি লাইন এটি। ইংল্যান্ডের ফুটবলের ক্ষেত্রে বর্তমানে এই কথাটি দারুণভাবে প্রযোজ্য! বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের জনক ইংলিশরা। অথচ তারা সবেধন নীলমনি পুরুষদের বিশ্বকাপে একবার মাত্র চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেই ১৯৬৬ সালে। এরপর পুরুষ কিংবা মেয়েদের কোনো বিশ্বকাপের সোনার ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারেনি ইলিশরা। বিশ্বকাপ জিতবে কি করে, ফাইনালেই তো উঠতে পারছিল না। অবশেষে ১৯৬৬ সালের পর এই প্রথম পুরুষ কিংবা মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। অর্থাৎ চলমান নবম নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ডের মেয়েরা। বুধবার বিকেলে আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে যৌথ স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংলিশরা। সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ইংল্যান্ডের হয়ে একটি করে গোল করেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এলা টুনে, ফরোয়ার্ড লরেন হেম্প ও আরেক ফরোয়ার্ড অ্যালেক্সিয়া রুশো। অস্ট্রেলিয়ান মেয়েদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ফরোয়ার্ড স্যাম কার। এর আগে মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে সুইডেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনাল মঞ্চে নাম লিখিয়েছে স্পেন। এর ফলে এবারের নারী বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পেতে যাচ্ছে ফুটবল দুনিয়া। কেননা স্পেন ও ইংল্যান্ড দু’দলই প্রথমবারের মতো ফাইনালে এসেছে। আগামী রবিবার বিকেল ৪টায় সিডনিতে হবে অল-ইউরোপিয়ান ফাইনাল মহারণ। ২০১৫ সালের পর ২০১৯। টানা দুটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে টানা তৃতীয় সেমিফাইনালে আর আক্ষেপের গল্প নয়, ইংল্যান্ডের মেয়েরা লিখেছেন প্রাপ্তির গল্প। যে গল্প প্রথমবার ফিফা নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৪ নম্বরে থাকা ইংল্যান্ড তিনবারের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলার পাশাপাশি ইউরোপিয় ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও। ২০২২ সালে জার্মানিকে হারিয়ে ইউরোপ সেরা হয়েছে তারা। দারুণ সুখের সময় পার করা ইংলিশ মেয়েদের সামনে এবার দেশকে ৫৭ বছর পর বিশ্বকাপ উপহার দেয়ার সুবর্ণ সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে ইংলিশরা ফেভারিট থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার জন্য বাড়তি সুবিধা ছিল স্বাগতিক দর্শকরা। সিডনিতে প্রায় ৭৬ হাজার দর্শক স্বাগতিকদের সমর্থন জোগান। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। চোখ ধাঁধানো পারফর্ম্যান্স প্রদর্শন করে ফাইনালের রঙিন মঞ্চে উঠে গেছেন ইংলিশ মেয়েরা। অবশ্য ম্যাচে গোলের প্রথম ভালো সম্ভাবনাও সৃষ্টি করে অস্ট্রেলিয়াই। কিন্তু স্যাম কারের প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন ইংলিশ গোলরক্ষক ম্যারি আর্পস। কিছুক্ষণ পর অস্ট্রেলিয়াও গোল হজম থেকে বাঁচে গোলরক্ষকের দৃঢ়তায়। ইংল্যান্ডের জর্জিয়া স্টানওয়ে অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক ম্যাকেঞ্জি আরনল্ডকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি। দুই গোলরক্ষকের দারুণ দুটি সেভের ম্যাচটি অবশ্য পরের দিকে দেখেছে এক এক করে চার গোল। যার প্রথমটি ৩৬ মিনিটে করে ইংল্যান্ড। বল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান রক্ষণে বাইলাইন থেকে পেছনে বাড়ান অ্যালেক্সিয়া রুশো, ভালো জায়গায় পেয়ে বুঝেশুনে দূরের পোস্টের ডান কোনা দিয়ে বল জালে পাঠান এলা টুনে। এই এক গোল নিয়ে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইংলিশরা। বিরতির পর ৬৩ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে জোরালো শটে গোল করে অস্ট্রেলিয়াকে ১-১ সমতায় ফেরান স্যাম কার। ৭১ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার উজ্জীবিত গ্যালারিকে স্তব্ধ করেন হেম্প। এই গোলে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার এলি কার্পেন্টারেরই দায় বেশি। ইংলিশ ডিফেন্ডার মিলি ব্রাইট লম্বা করে বল বাড়ান হেম্পের দিকে, তবে বল নাগালে নেয়ার সুযোগ ছিল পাহারায় থাকা কার্পেন্টারের। তিনি বিপন্মুক্ত করতে না পারলে বল নিয়ন্ত্রণে নেন হেম্প। এরপর কোনাকুনি শটে অস্ট্রেলিয়ার জাল কাঁপান। ম্যাচে দ্বিতীয়বার পিছিয়ে পড়ার পর অস্ট্রেলিয়া মনোযোগ বাড়ায় আক্রমণে। আর সেটি করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের পাল্টা আক্রমণে ৮৬ মিনিটে তিন নম্বর গোল হজম করেন সকারু মেয়েরা। গোলটি করেন ইংল্যান্ডের রুশো। এই গোলেই প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয় ইংলিশ মেয়েদের।
Discussion about this post