বিনোদন প্রতিবেদকঃ যে প্রত্যাশা নিয়ে শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছে, সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি সিনেমাটি। সিনেপ্লেক্সসহ দেশের ৪১টি সিনেমা হলে সিনেমাটি মুক্তি দেয়া হয়েছে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, বিশ্বজুড়ে ‘পাঠান’-এর যে ক্রেজ সৃষ্টি হয়েছিল তা বাংলাদেশেও পড়বে। তাদের এ ধারণা সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দেশে হিন্দি সিনেমা হলে গিয়ে দর্শকের দেখার আগ্রহ বরাবরই কম ছিল। সুদূর অতীত থেকে পাঠান মুক্তি পর্যন্ত সেই প্রবণতাই দেখা গেল। গতকাল সিনেমাটির প্রথম দিনে কিছু সিনেপ্লেক্স ছাড়া বাকি সিনেমা হলগুলোতে ‘পাঠান’ দর্শক টানতে পারেনি। মধুমিতায় শো’র সংখ্যা বাড়িয়েও কর্তৃপক্ষের আশা অনুযায়ী, দর্শক সাড়া পায়নি। হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেমন আশা করেছিলাম, সে আশা পূরণ হয়নি। যশোরের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল মনিহার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৪০০ সিটের সিনেমা হলে প্রতি শোতে গড়ে ৭০ থেকে ৯০ জনের মতো দর্শক হয়েছে। যেভাবে আশা করেছিলাম, তা হয়নি। অন্যান্য সিনেমা হলগুলোতেও ‘পাঠান’ আশানুরূপ দর্শক টানতে পারেনি। তবে সিনেপ্লেক্সগুলোতে দর্শকের কিছুটা ভিড় ছিল। বিদেশী ভাষার সিনেমা বিশেষ করে বলিউডের সিনেমা দেশে মুক্তির ব্যাপারে বরাবরই বিরোধিতা করে আসছেন মুভিলর্ডখ্যাত মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আমি যা বলেছিলাম, তাই হয়েছে। দেশের সিনেমা হলগুলোর খোঁজখবর আমি নিয়মিত রাখি। আমি নিজেও সিনেমা হল চালাই। ফলে কোথায় কোন সিনেমা কত ব্যবসা করল, তার খবর মুহূর্তে আমার কাছে চলে আসে। শুধু সিনেপ্লেক্স দিয়ে সিনেমার পুঁজি উঠে আসে না। সিনেমার ব্যবসা হয়, মফস্বলে আমাদের সাধারণ দর্শককে দিয়ে। তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম ‘পাঠান’ আমাদের দেশে চলবে না। কারণ হিসেবে বলেছিলাম, আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমাদের সাধারণ দর্শক আমাদের দেশের ভাষার সিনেমা দেখতেই ভালবাসে। এই যে গত ঈদে যে ৮টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, সেগুলো তো ব্যাপক দর্শক দেখেছে। শাকিবের সিনেমাটি দর্শক দেখেছে। অন্য সিনেমাগুলো দেখতেও দর্শক সিনেমা হলে গিয়েছে। এখন তো দেখা যাচ্ছে, শাহরুখের সিনেমা শাকিবের সিনেমার কাছে মার খেয়ে গেছে। যারা হিন্দি সিনেমা আমদানি করা নিয়ে লাফালাফি করেছে, তাদের বোঝা উচিৎ আমাদের দেশের সিনেমা ছাড়া দর্শক বিদেশী সিনেমা দেখে না। এটা অতীতেও দেখা গেছে। এবারও তা প্রমাণিত হয়েছে। যারা হিন্দি সিনেমা আমদানি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল, তারা এখন কি বলবে? আমার কথা হচ্ছে, বিদেশি সিনেমা আমদানির চিন্তা বাদ দিয়ে তাদের উচিৎ আমাদের দেশীয় গল্প নিয়ে ভাল সিনেমা বানানোর দিকে মনোযোগ দেয়া। আমাদের দর্শক কি চায়, তা বুঝে সিনেমা নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া। ধার করা সিনেমা দিয়ে আমাদের দর্শকের মন পাওয়া যাবে না। চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হলে দেশের সিনেমা বানাতে হবে। হিন্দি বা বিদেশী সিনেমা যে দর্শক প্রত্যাখ্যান করেছে, তা তাদের বুঝতে হবে। যারা এতদিন বলেছেন, হিন্দি সিনেমা চালালে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে এবং আমাদের নির্মাতারা ভালো সিনেমা বানাতে উৎসাহী হবে, তাদের এ ধারণা যে ভুল, তা পাঠানের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। দর্শক ‘পাঠান’ দেখতে হলে যাচ্ছে না। প্রতিযোগিতা করতে হবে নিজেদের সিনেমার মধ্যে। ডিপজল বলেন, পাঠান থেকে যে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, এ অভিজ্ঞতার মধ্যে শিক্ষার বিষয় আছে। বিষয়টি হলো, আমাদের সিনেমাকে চালু রাখতে হবে, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সিনেমা দিয়ে। এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আগামী কোরবানির ঈদে আমাদের যে সিনেমাগুলো মুক্তি পাবে, সেগুলোর কাছে ‘পাঠান’-এর আরও শোচনীয় পরাজয় ঘটবে।
Discussion about this post