ঢাকা : ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন। এছাড়াও দেশটি আন্তর্জাতিক ফোরামে সকল ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাবে। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রবিবার জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এমন আশ্বাস দিয়েছেন। সংসদ ভবনস্থ স্পিকারের কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সুদীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন, সফর বিনিময় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। স্পিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষার্থে তাদের নিজ দেশে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে চীনের রাষ্ট্রদূতকে প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রদূতকে জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে চীন সফর এবং তার অভিজ্ঞতা তিনি পরবর্তীতে লিপিবদ্ধ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী মন্তব্য করে স্পিকার আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ়। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, পদ্মাসেতু নির্মাণে কারিগরি সহায়তা, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহায়তা, কোভিডকালীন সিনোফার্ম ভ্যাক্সিন সহায়তা ইত্যাদিসহ চীন সর্বদা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। এসময় বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি দেশটির প্রতি আহবান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে সকল ইস্যুতে চীন বরাবরের মতোই বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে থাকে। সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের মাধ্যমে সফর বিনিময় ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে দুই দেশের সংসদ সদস্যরা গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত এবং জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে গড়ে তোলার জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত। বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান। ভিশন ২০৪১ অর্জনে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে চীনের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত। এসময় ঢাকায় চীন দূতাবাস ও সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার লক্ষ্য সামনে রেখে রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৯ শতাংশ, গড় মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৪ মার্কিন ডলার, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছর। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬.৯ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ২৪.১শতাংশ। এমন সব হিসাব নিকাশ ও লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে প্রণীত রূপকল্প ২০৪১ এর খসড়া ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেন কমিটির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দারিদ্র্য নিরসন, আয়বৈষম্য হ্রাস, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে এই রূপকল্প প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে।
Discussion about this post