ঢাকা: সরকার এক টাকাও অপচয় করেনি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘মানুষের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য, আমরা সে লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি। দেশের কল্যাণে, জনগণ ও দেশের জন্যই রিজার্ভের টাকা ব্যয় হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এক টাকাও অপচয় করেনি। অথচ রিজার্ভের টাকা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিরোধীদল।’ শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনের সময় একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকারপ্রধান। বিএনপি সরকারের সময় রিজার্ভ ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেদের টাকায় উন্নয়ন কাজ করছি। বিএনপির সময় রিজার্ভের ঘাটতি ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেটা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে। চুরি করে অর্থ সম্পদ বানিয়েছে বিএনপি নেতারা। আওয়ামী লীগ একটি টাকাও অপচয় করেনি।’ মহামারী করোনাভাইরাসের সময় অর্থনীতি শক্তিশালী রাখতে তার সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ-পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘করোনার সময়ও আমাদের অর্থনীতি যাতে শক্তিশালী থাকে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।’ ‘সেইসঙ্গে সকলের কাছে আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। যেহেতু সারা বিশ্বব্যাপী, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন-ফলে বিশ্বে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে।’ দুর্ভিক্ষের ধাক্কা এড়াতে সবাইকে সাবধান থাকার বিষয়ে তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এই ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরকে ফসল উৎপাদন করেতে হবে। খাদ্য উৎপাদন করতে হবে এবং পুষ্টি নিশ্চয়তার ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘যদি কখনও বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, আমাদের বাংলাদেশে যাতে কোনও মতেই তার ধাক্কা না লাগে। আমাদের সাবধানতা আমাদেরই নিতে হবে। সেইদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ তার সরকারের সময়ে সড়কপথ, নৌপথ, আকাশপথের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করছি। এসবের জন্য টাকা খরচ হচ্ছে। রিজার্ভের টাকা তো লাগবেই, এটা বাস্তবতা।’ ‘মানুষের যোগাযোগ যাতে আরও সহজ হয়, পরিবহন চলাচল যাতে আরও সহজ হয়, তারই ব্যবস্থা করছি। আমরা সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথ সবগুলোরই ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এটা আকাশ থেকে পড়েনি।’ বেশিরভাগ উন্নয়ন কাজ নিজেদের অর্থায়নে হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এজন্য যাতে কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়। নিজেদের সম্মান নিয়ে আমরা নিজেরা চলবো। মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ সম্মানের সঙ্গে চলবে।’ ‘কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমাদের মাথা উঁচু করেই চলতে হবে। একথাটা সকলকেই মনে রাখতে হবে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দেশের মানুষের কল্যাণটাই সব থেকে বড় কথা মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। মানুষ এখন ৩০ প্রকার ওষুধ পায় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষকে বিনা পয়সায় ওষুধ দিচ্ছি। অর্থাৎ মানুষের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য, সেই কাজই আমরা করে যাচ্ছি।’ আশুলিয়ায় মূল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে মোট ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে চীনা এক্সিম ব্যাংক এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্প ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ দেবে চীন। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল এবং ইপিজেডকে যুক্ত করবে।
Discussion about this post