ঢাকা: একাত্তরে যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এই আইন সংশোধনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রারদের দুই দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের আইনমন্ত্রী একথা বলেন। আনিসুল হক বলেন, ‘একাত্তরে দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করার জন্য আইনের পরিবর্তন জরুরি। ইতোমধ্যে এই আইন সংশোধনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এই আইন পাস হওয়ার পরই বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।’ এসময় মন্ত্রী জানান, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল নিয়ে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাটি দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া ভিন্ন নামে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আবেদন নির্বাচন কমিশন কীভাবে নিষ্পত্তি করে সেটিও সরকার পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানান আইনমন্ত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।’ ‘আমার মনে হয় না যে, খালেদা জিয়াকে যেই ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১ ধারায় দণ্ডাদেশ স্থাগিত রেখে শর্তযুক্তভাবে যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তার পরিবর্তন আনার কোনো চিন্তা ভাবনা সরকার করছে।’ এর আগে সাব-রেজিস্ট্রারদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘জনগণকে কোনো হয়রানি না করে দ্রুততম সময়ে সর্বোত্তম সেবা দিতে হবে এবং জাল-জালিয়াতি রোধে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।’ আনিসুল হক বলেন, ‘জনগণকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মানসম্মত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার নিবন্ধন অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করে সব ভূমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে ডিজিটাইজড্ করতে চায়। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই আমরা ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ই-রেজিস্ট্রেশন পাইলটিং প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার আলোকে সারাদেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ডিপিপি তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১২২১ কোটি টাকা।’ ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সারাদেশে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হলে কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই নির্ভুলতার সঙ্গে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে দলিলের দাতা এবং গ্রহীতা রেজিস্ট্রেশন কার্য সম্পাদন করতে পারবেন। ফলে সরকারি রাজস্ব আদায়েও গতিশীলতা বাড়বে।’ এছাড়া সারা দেশের রেকর্ড রুমে রক্ষিত বালাম বইগুলো ই-আর্কাইভে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে। অনলাইন ব্যবস্থায় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু হলে জনগণ সহজেই নিবন্ধিত দলিলের অনুলিপি তাৎক্ষণিক সংগ্রহ করতে পারবেন বলেও জানান মন্ত্রী। এর মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ বহুলাংশে কমে যাবে এবং জাল-জালিয়াতির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুক। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার বক্তব্য দেন।
Discussion about this post