জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পুলিশ স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতনে সুমাইয়া বানু (১৯) নামের এক গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কাঠালবাড়ী গ্রামের আবু কালাম মন্ডলের ছেলে সজীব হোসেন (২৬) ও তার মা মাহফুজা বেগম (৪৫)। বর্তমানে ওই পুলিশ সদস্য নারায়ণগঞ্জ জেলায় শিল্প পুলিশে গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য সজীব হোসেনের সঙ্গে ২০২০ সালে উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের কয়াশোবলা গ্রামের শহীদুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া বানুর (১৯) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ ঘরের আসবাবপত্র তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে চাপ দেয় স্বামী ও শাশুড়ি। এসব না আনার কারণে তারা প্রতিনিয়ত গৃহবধূ সুমাইয়া বানুকে মারধরসহ শাররীক নির্যাতন চালাত। জানা যায়, গত বুধবার রাতে ওই পুলিশ সদস্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে। এ দিন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটকে রাখেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে গৃহবধূর পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এরপর তারা দুপুরের দিকে থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত মা-ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এদিকে এর আগেও এমন ঘটনায় ওই গৃহবধূ তার স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমানে তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান ওই গৃহবধূ। গৃহবধূ সুমাইয়া বানু বলেন, আমার স্বামী ও শাশুড়ি বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকাসহ টিভি, ফ্রিজ, ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে আসতে চাপ দিয়ে আসছেন। না আনায় তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। বুধবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসার পর রাতের বেলায় আমার স্বামী এবং শাশুড়ি মিলে আমাকে মারধর করে। তিনি বলেন, একপর্যায়ে আমি রাতেই তাদের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় এলে আবারও আমাকে ধরে নিয়ে মারধর করে এবং ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। তারা হত্যার হুমকি দেয় এবং আমাকে হাত-পা বেঁধে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। সকালে আমার বাবার বাড়ির লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার মা মাহফুজা বেগম বলেন, আমি ওই মারধরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। যা ঘটেছে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘটেছে। প্রতিবেশী তোজাম্মেল হোসেন বলেন, মূলত শাশুড়ির কারণেই তাদের সংসারে এমন ঝামেলা লেগে আছে। আর ছেলেটিও বদমেজাজি। আমরা প্রতিবেশীরা কিছু বলতে গেলে আমাদেরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। নির্যাতিত গৃহবধূর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, বিয়ে দেওয়ার পর থেকে ওরা আমার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছে। আজ আবার মেয়েকে মারধর করে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছে। স্থানীয়রা খবর না দিলে হয়ত এতক্ষণে আমার মেয়ের লাশও পাওয়া যেত না। সকাল বেলা গিয়ে ঘরের মধ্যে থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আমার মেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি। আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Discussion about this post