আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আকস্মিকভাবে সিংহাসন ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গ্রেথে। তাঁর এ ঘোষণায় সবাই অবাক হয়ে আছেন। টেলিভিশনে নতুন বছর শুরুর ভাষণ দিতে গিয়ে সিংহাসন ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। এসময় তার এই ভাষণ টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল। আগামী ১৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন ত্যাগ করবেন তিনি। এদিন তার সিংহাসনে আরোহণের ৫২ বছর পূর্ণ হবে। সোমবার (১ জানুযারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী রানি ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গ্রেথে ৫২ বছর পর আগামী ১৪ জানুয়ারি সিংহাসন ত্যাগ করবেন এবং তার বড় ছেলে ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডেরিক তার স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে রোববার ঘোষণা করেছেন তিনি। ৮৩ বছর বয়সী এই রানি ১৯৭২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। রবিবার নববর্ষের আগে নিজের ঐতিহ্যবাহী বক্তৃতার সময় লাইভ টিভিতে আশ্চর্যজনক এই ঘোষণা দেন তিনি। নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেওয়া রানির এই ভাষণ প্রতিবছরই ডেনমার্কের বহু মানুষ দেখে থাকেন। সদ্য সমাপ্ত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার পিঠের একটি সফল অপারেশনের কথা উল্লেখ করে রানি দ্বিতীয় মার্গ্রেথে বলেন, ‘অস্ত্রোপচার স্বাভাবিকভাবেই ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তার জন্ম দিয়েছে যে- পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সময় এসেছে কিনা’। তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখনই সঠিক সময়। আগামী ১৪ জানুয়ারি – আমি আমার প্রিয় বাবার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ৫২ বছর পর – আমি ডেনমার্কের রানি হিসাবে পদত্যাগ করব। আমি আমার ছেলে ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডরিকের কাছে সিংহাসন ছেড়ে দিচ্ছি।’ রয়টার্স বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গ্রেথে ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রানি হয়ে ওঠেন। আর গত বছরের জুলাই মাসে তিনি ডেনমার্কের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রানি হন। ডেনমার্কে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা নির্বাচিত সংসদ এবং এর সরকারের হাতে থাকে। আর রাজা বা রানি রাষ্ট্রীয় সফর থেকে শুরু করে জাতীয় দিবস উদযাপন পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকেন। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন আজীবন দায়িত্ব পালনের জন্য রানিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘এটা বোঝা এখনও কঠিন যে, এখন সিংহাসন পরিবর্তনের সময় এসেছে। অনেক ডেনিশ এখনও অন্য কোনও রানিকে চেনেন না।’ তিনি বলেন, ‘রানি মার্গ্রেথে ডেনমার্কের মূর্ত প্রতীক।’ উল্লেখ্য, ১৯৪০ সালে ডেনমার্কের সাবেক রাজা নবম ফ্রেডেরিক এবং রানি ইনগ্রিডের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মার্গ্রেথে। তিনি তার সারা জীবন ডেনিশ নাগরিকদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়ে এসেছেন। এমনকি নাগরিকদের অনেকেই তার কৌশলী এবং সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের ভক্ত। এছাড়া রানি দ্বিতীয় মার্গ্রেথে প্রত্নতত্ত্বের প্রতি তার ভালোবাসার জন্যও পরিচিত এবং বেশ কয়েকটি খনন কাজেও তিনি অংশ নিয়েছেন।
Discussion about this post