বাগেরহাট প্রতিনিধি: নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর প্রথম দিনেই সুন্দরবনে মাছ ধরতে রওনা হয়েছেন বাগেরহাট জেলার এক হাজার জেলে। শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের সংশ্লিষ্ট স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র (পাস পারমিট) নিয়ে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে প্রথম দিন সুন্দরবনে গেছেন তারা।এছাড়া যে সকল জেলে এখনও তাদের জাল-নৌকা মেরামত সম্পন্ন করতে পারেননি তারা পরবর্তীতে পাস সংগ্রহ করে রওনা হবেন বলে জানিয়েছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, অনুমতিপত্র প্রদানকালে অভয়ারণ্যে প্রবেশ না করা, কোনো ধরণের বিষাক্ত দ্রব্য ব্যবহার না করা, পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্য নদী ও বনে না ফেলা এবং বনের অন্যকোনো বনজ সম্পদের ক্ষতিসাধন না করার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জেলেদের।এছাড়া বন ও বনদস্যুদের আক্রমণের শিকার হলে জেলেরা যাতে দ্রুত জানাতে পারেন সেজন্য সকল স্টেশন ও টহল ফাঁড়ি অফিসের মোবাইল নম্বর তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলেদের নিরাপত্তায় স্মার্ট প্যাট্রলিং টিম ও বনরক্ষীদের নিয়মিত টহল পরিচালিত হবে।প্রথম দিন বনে যেতে পারেননি এমন জেলেদের মধ্যে শরণখোলা সাউথখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের ছগির বয়াতী, সোনাতলা গ্রামের লালমিয়া এবং কামাল তালুকদার জানান, তারা এখনো নৌকা প্রস্তুত করতে পারেননি। দু-এক দিনের মধ্যে তাদের নৌকা মেরামত সম্পন্ন হবে। এর পর তার বনে যাবেন।জেলেরা আরও জানায়, নতুন করে বেশ কয়েকটি দস্যু বাহিনী বনে ঢুকেছে। অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) শেষে এসব বাহিনী জেলেদের অপহরণ ও নির্যাতন করতে পারে। এখন তারা সেই ভয়ে আছেন।শরণখোলা বাজারের মৎস্য আড়ৎদার জালাল মোল্লা, সেলিম খানসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জেলে-ব্যবসায়ী সবাই এবার আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ দস্যুরা কখন জানি হানা দেয়। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে জেলেদের বনে পাঠানো হয়েছে। দস্যুরা একবার ধরলে মুক্তিপণ দিয়ে সেই জেলেকে ছাড়িয়ে আনতে চালান-ব্যবসা সবই শেষ। তাই দস্যুরা যাতে তৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানান তারা।সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. খলিলুর রহমান বলেন, তার স্টেশন দিয়ে প্রথম দিনে ২৫০টি নৌকায় পাসপারমিট দেওয়া হয়েছে। একেকটি নৌকায় গড়ে দুই-তিন জন করে মোট ৬০০ জেলে বনে প্রবেশ করেছেন। শরণখোলার সুন্দরবন কেন্দ্রিক জেলের সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। অনেকেই এখনো জাল-নৌকা প্রস্তুত করতে পারেননি। প্রস্তুত হলেই তারা দু-একদিনের পর আবার অনেকে আগামী গোনে বনে যেতে পারেন।পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব বলেন, জেলেরা যাতে বনের পরিবেশের ক্ষতি ও কোনো ধরণের অপরাধে জড়িত না হয় সেজন্য তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া বিপদ এড়াতে প্রত্যেক জেলে নৌকায় সংশ্লিষ্ট স্টেশন ও টহল ফাঁড়ি অফিসের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। জেলেদের মধ্যে দস্যুভীতি দেখা গেছে। তাই জেলেদের ও পর্যকটদের নিরাপত্তা এবং দস্যুদের অপতৎপরতারোধে কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
Discussion about this post