সিলেটে প্রতিনিধি: সিলেটে বন্যার পানি কমলেও পানিবাহিত রোগ বেড়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ৫০০ জন লোক পানিবাহিত ডায়রিয়া, চর্ম ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে সংক্রমিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রোগি হচ্ছেন সিলেটে সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকার। বেশিরভাগই আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু-কিশোর। সংক্রমণ রোধে জেলায় ১৪০ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকেলে মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেটে জেলার সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে বেড়েছে পানিবাহিত রোগ। আমাদের হিসেব অনুযায়ী জেলায় ৫০০ জন লোক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রোগি হচ্ছেন শিশু-কিশোর। তারা সাবধানতা অবলম্বন না করায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগি বেশি। এর পাশাপাশি চর্ম ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রোগে কয়েকজন ভুগছেন।’ গেল ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫০ জন রোগি সনাক্ত হয়েছেন উল্লেখ করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫০ জন লোক আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জন করে জেলার জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে, কোম্পানীগঞ্জে ৭ জন, গোয়াইনঘাটে ৬ জন, সিলেট সদরে ৩ জন, দক্ষিণ সুরমায় ১ জন, বালাগঞ্জে ২ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ৫ জন, ওসমানী নগরে ২ জন এবং বিশ্বনাথ উপজেলার ৩ জন বাসিন্দা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’ সংক্রমণ রোধে জেলায় ১৪০ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে উল্লেখ করে ডা. শাহরিয়ার বলেন, ‘বন্যার কারণে যাতে সংক্রমণ বাড়ে না ; সে লক্ষ্যে আমাদের ১৪০ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তারা খুবই আন্তরিকতার সহিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া বন্যাকবলিতদের মধ্যে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে জনসচেতনতার পাশাপাশি খাবারের পানি বিশুদ্ধিকরণের ট্যাবলেট বিতরণ করছে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তখনই এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’ সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এর সাথে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল যুক্ত হয়ে দেখা দেয় বন্যা। বৃষ্টি ও ঢল না থামায় সেই বন্যা ভয়াল রূপ ধারণ করে। সিলেট জেলা ও মহানগরীর সিংহভাগ এলাকা তলিয়ে যায় পানির নিচে। পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে গত ২০ মে রাত থেকে। ঢল ও বৃষ্টির বেগ কমে আসায় ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে পানি। ২৩ মে সিলেট নগর বানের জলমুক্ত হয়। তবে সিলেট জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি নামার গতি কম। এখনও কিছু কিছু এলাকা পানিবন্দি রয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করার পর থেকে সিলেট জেলা ও মহানগরে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, ডায়রিয়ার প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। গত রোববার অবধি ১১৪ জন ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন। কিন্তু পরের তিনদিনে তা ৫০০ জনে পৌঁছায়। জেলায় ১৪০ টি টিমের মধ্যে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৬টি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। এ ছাড়া কানাইঘাটে ১২টি, জৈন্তাপুরে ১১টি, বিশ্বনাথে ১১টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জকিগঞ্জে ১০টি, সদর উপজেলায় ১০টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, ওসমানীনগরে ৯টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বালাগঞ্জে ৭টি ও কোম্পানীগঞ্জে ৭টি টিম কাজ করছে। এর বাইরে জেলা শহরের জন্য ৩টি টিম রাখা হয়েছে।
Discussion about this post