ঢাকা: বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামকে ভারতের নয়াদিল্লিতে দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ফেসবুক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পালিয়ে গেছেন বলে জানা যায়। এরআগে ভারতের কলকাতার ইকোপার্কে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার দেখা মিলেছে বলে জানা যায়। মনিরুল ইসলামের ছবি দিয়ে তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, পলাতক এসবি প্রধান (সাবেক) মনিরুল ইসলামের অবস্থান নিশ্চিত করেছে অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্র। ভারতের রাজধানী দিল্লির কনট প্লেসের (Connaught Place) একটি গ্রোসারি স্টোরে আজ বিকালে মনিরুল ইসলামকে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার সময় ক্যামেরা বন্দি করেন তিনি। আরও জানা যায়, ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পলাতক বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বসবাস করছেন। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারত সরকারের উচিত হবে অনতিবিলম্বে এদের খুঁজে বের করে বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা। এ বিষয়ে India in Bangladesh (High Commission of India, Dhaka) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, তিনি পালিয়ে যাননি, পালিয়ে যাবেনও না। তিনি দেশেই ছিলেন, দেশেই আছেন। ভবিষ্যতে দেশেই থাকবেন। মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় ১২টির বেশি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদ্য সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পুলিশের বিশেষ শাখার সাবেক এই প্রধানের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্যয়ের জন্য গত ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকা নিয়ে নিজের কক্ষে রাখার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই টাকা বিতরণের আগেই ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয়। ওইদিন থেকে আর অফিসে যাননি মনিরুল। কিন্তু তার কক্ষে ২৫ কোটি টাকা থাকার তথ্যটি এসবির কয়েকজন কর্মকর্তা জানতেন। পরে সেই টাকা এসবির কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের কাছে নিয়ে নেন। ২৫ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০২১ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান থেকে এসবি প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মনিরুল ইসলামকে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে এএসপি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন মনিরুল। গোয়েন্দা শাখায় ৯ বছর ও বিশেষ শাখায় দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া সিটিটিসির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মনিরুল বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক লাভ করেন। এদিকে গত ৭ সেপ্টেম্বর মনিরুল ইসলামের স্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। বিসিএস ১৭ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সায়লা ফারজানা বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব।
Discussion about this post