ঢাকা: খুলনায় সরকার গণসমাবেশ ঠেকাতে যা করেছে তা নজিরবিহীন ও কলংকজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকারের নির্দেশে আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু জনতার ঢলে পরিপূর্ণ এখন খুলনা শহর। তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতেই সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিয়েছেন।’ সরকার গণসমাবেশ ঠেকাতে যা করেছে তা নজিরবিহীন ও কলংকজনক বলেও মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে সমাবেশের দুদিন আগে সড়ক পরিবহন ও লঞ্চ ধর্মঘট শুরু করা হয়। সরকারের নির্দেশে এই ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ, রোগী, পরীক্ষার্থীরা। গতকাল থেকে ফেরি ও নৌ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। সমাবেশে যাতে লোক সমাগম না হয়, তার সকল চেষ্টাই করে যাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে চেকপোস্টসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।’ ‘খুলনা মহানগরীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে গণসমাবেশে মানুষের ঢল যাতে না নামে’ মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের এহেন অপকৌশলে জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়লেও তারা অদম্য উৎসাহ-উদ্দীপনায় সমাবেশ স্থলের দিকে ছুটে যাচ্ছে। প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাসসহ নদীপথে ট্রলালযোগে খুলনা মহানগরীর দিকে যাওয়ার পথে পথে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে হয়রানি করছে অত্যধিক মাত্রায়।’ ‘বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বশ চন্দ্র রায় খুলনায় যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সেই বাড়ির লোকজনসহ সেখান থেকে প্রায় ১৯ জনকে আটক করার কথা উল্লেখ করে দলটি এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শুধু স্থানীয় নেতাকর্মীরাই নয়, ঢাকা থেকেও যেসব বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুলনা গেছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে।’ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মাগুরা স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মাইক্রোবাস সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ আটক করে গতকাল তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা অভিযোগ করেন, সাতক্ষীরা থেকে বাসযোগে সমাবেশে আসার পথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৫০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বাগেরহাট থেকে আসার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি ট্রলার আটকে দিয়েছে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’। ‘ঝিকরগাছা থেকে যাওয়ার পথে ৩০-৪০ জন নেতাকর্মীকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কেশবপুর থেকে সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে সোনাডাঙ্গায় ‘এই গাড়ি থাম’ বলে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’ হকিস্টিক, রড ও ছুরি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ভয়ানক জখম করেছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। সমাবেশ স্থলের আশপাশসহ খুলনা মহানগরীর প্রবেশ পথে নেতাকর্মীদের ঢুকতে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সকল বাধা উপেক্ষা করে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশকে সফল করতে প্রবল আনন্দ-উদ্দীপনায় খুলনা সোনালী ব্যাংক চত্ত্বরে ইতোমধ্যে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, সাতক্ষীরাসহ বিভাগের জেলাগুলো থেকে চিড়া-মুড়ি-গুড়-পানি-বিছানা নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছে। পথে অনেকেই খবরের কাগজ কিংবা চাদর বিছিয়ে রাত্রি যাপন করেছে, এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।’ ‘গণসমাবেশকে ঘিরে সরকার যে নীচুতা, নীতিহীনতা, স্বার্থপরতা এবং ভীতি প্রদর্শনের পথ অবলম্বন করেছে তা এক কলঙ্কজনক নজির’ বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন সরকারের দুর্বৃত্তপনার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যখন পথে পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করছে তখন সব জেনে বুঝেই প্রশাসন নিশ্চিন্তে নিদ্রা গেছে। সমাবেশকে নিয়ে যে তাণ্ডব দৃশ্যমান তা আওয়ামী ফ্যাসিবাদেরই উন্মত্ত লীলা। এই মূহুর্তে আওয়ামী ত্রাসের ক্রমপরিবর্তনশীল সংজ্ঞা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এদের নিষ্ঠুরতার তুলনা বিশ্ব ইতিহাসে কম।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন ভুইয়া শিশির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।
Discussion about this post