ঢাকা: সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করা হবে। উপ-সচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। পরীক্ষা ছাড়া কোনো পদোন্নতি হবে না। স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষকের মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ‘ক্যাডার’ থেকে বের করার সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এ কথা বলেন। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেছেন, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার সুপারিশ করা হচ্ছে। মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, তে রিক্রুটমেন্ট (নিয়োগ), বিভিন্ন ব্যাপারে পুলিশের ভেরিফিকেশন একটা ম্যান্ডেটরি (বাধ্যতামূলক) জিনিস। এটা আমরা সুপারিশ করছি থাকবে না। কোথাও থাকবে না। তিনি বলেন, আপনি নাগরিক, পাসপোর্ট নেবেন আপনার নাগরিক অধিকার। আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন করতে হবে। ইংল্যান্ডে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে পোস্ট অফিসে পাসপোর্ট চলে আসে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা কমিশন আছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী জানি না। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি হল এটা। আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়- খারাপ লোক যখন দেশে আসে, তারে ঢুকতে না দেওয়ার কারণ কী? বরং সে ভেতরে আসলে আমার সুবিধা হল, তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে। যদি কেউ চলে যেতে চায় চলে গেল, অসুবিধা কী? বিমানবন্দরে এগুলো করা হয়, আমি মনে করি এটা সময়ের অপচয় এবং অপ্রয়োজনীয়। কে করে এটা, এই যে অদৃশ্য শক্তি- আমার ব্যক্তিগত অভিমত যেগুলো হওয়া উচিত না। মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে উপ-সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে। তিনি বলেন, অতীতে দলীয় ভিত্তিতে ক্যাডার পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কমিশন প্রধান বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি উপ-সচিব থেকে ওপরের পদে পিএসসির পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি হবে। পরীক্ষা ছাড়া আর কেউ পদোন্নতি পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নেবে। ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি পাবেন না। প্রতিটি স্তরে (উপ-সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত) এটি হবে না। উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব এই দুই পর্যায়ে হবে। এরপরের পর্যায়ে সরকার পদোন্নতি দিতে পারবে। কমিশন প্রধান বলেন, আর যে পরীক্ষা হবে, সেখানে যদি একজন কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশি নম্বর পান, তিনি তালিকায় এক নম্বরে চলে আসবেন। উপ-সচিবের তালিকায় তিনি এক নম্বরে আসবেন। আর পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে কোটা ছিল তা ৫০ শতাংশ করে রাখা হবে। প্রশাসন ক্যাডারে ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারে ৫০ শতাংশ। বর্তমানে উপ-সচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষকের মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ‘ক্যাডার’ থেকে বের করার সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কমিশন প্রধান বলেন, শিক্ষা ক্যাডারটা অযৌক্তিক। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা আলাদা। আমরা সুপারিশ করেছি এটা ক্যাডার করে রাখা যাবে না। একজন চোখের ডাক্তার, একজন দাঁতের ডাক্তার, একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান; তারা কি পদোন্নতি একসঙ্গে পাচ্ছে? সেজন্য আমরা বলছি এটা ক্যাডার রাখা যাবে না, এটা আমাদের চিন্তা। এটা ক্যাডার করা অযৌক্তিক হয়েছে। এগুলোকে আলাদা করতে হবে। বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এই দুই বিভাগ ছাড়া বাকি সবাই ক্যাডার থাকবে। এটা আমাদের ধারণা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আপনাদের একটা খবর দিতে চাই, পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে সরে যেয়ে আমাদের জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন আলাদা হয়েছে। ঠিক এরকম আমরা স্বাস্থ্য ক্যাডারকে আলাদা করার পরামর্শ দিয়েছি এবং শিক্ষা ক্যাডারকে আলাদা করার পরামর্শ দিয়েছি। এটা হয়ে যাবে। ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব মো. মোখলেস উর রহমান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা সারা দেশের ম্যাপ দেখে ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার সুপারিশ করেছি। সরকার যদি মনে করে, ১০টি বিভাগ করে দেবে। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post