আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় যে পরিমান পেট্রোলের মজুত আছে তাতে আর মাত্র এক দিন চলবে । দেশটি তার ৭০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে। টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে রানিল বিক্রমাসিংহে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানির জন্য তাদের আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সাড়ে সাত কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নোট ছাপাতে হবে। মি. বিক্রমাসিংহে আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসকে হয়তো বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিতে হতে পারে। দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতিতে আঘাত এসেছে মহামারি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও করহ্রাসের কারণে। বৈদেশিক মুদ্রার ধারাবাহিক সঙ্কট এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি দেশটিতে ঔষধ, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মারাত্মক অভাব তৈরি করেছে। রাজধানী কলম্বোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় যানবাহন অটোরিকশা এবং অন্যান্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে পেট্রোল পাম্পগুলোতে “এই মুহূর্তে আমাদের একদিনের ব্যবহার উপযোগী পেট্রোলের মজুত রয়েছে। আগামী কয়েক মাস হবে আমাদের জীবনের সবচাইতে কঠিন সময়”, বলেন মি. বিক্রমাসিংহে। গত বৃহস্পতিবারই মাত্র তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে তিনি এও জানান, ভারতের সাথে একটি ক্রেডিট লাইন ব্যবহার করে আনা কিছু পেট্রোল ও ডিজেল আগামী কয়েকদিনের চাহিদা হয়তো মেটাতে পারে। মি. বিক্রমাসিংহে বলেন, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রা ছাপতে হবে যাতে সরকারী কর্মচারীদের বেতন দেয়া যায় এবং অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধ করা যায়। “ইচ্ছের বাইরে গিয়ে মুদ্রা ছাপার অনুমোদন দিতে বাধ্য হচ্ছি আমি যাতে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের বেতন দেয়া যায় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার মূল্য পরিশোধ করা যায়। যাইহোক, আমাদের মনে রাখতে হবে, মুদ্রা ছাপানোর অর্থ হচ্ছে রুপির মূল্য কমে যাওয়া”, বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থিক খাত স্থিতিশীল করতে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস বিক্রি করে দেয়ার প্রস্তাব দেন। এই প্রতিষ্ঠানটি এক বছরে সাড়ে ৪০০ কোটি শ্রীলঙ্কান রুপি লোকসান দিয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট গোটাভায়া রাজাপাকশা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বড় এবং কোথাও কোথাও সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের সাথে সরকার সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্টের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকশা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাড়াঁন। এসব সহিংসতায় নয়জন মানুষ মারা যান। আর আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। গত শুক্রবার মি. বিক্রমাসিংহে বিবিসিকে বলেন, অর্থনৈতিক সঙ্কট “দূর হওয়ার আগে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে”। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসার পর দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি মানুষকে তিনবেলা খাবার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশ্বের কাছে আরও আর্থিক সহায়তার আবেদন জানান।
Discussion about this post