ঢাকা : ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে কারামুক্তির পর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। গ্রেপ্তারের ১৯ দিনের মাথায় রবিবার কারামুক্ত হন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞানের এ শিক্ষক। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এর আগে রবিবার দুপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক মোতাহারাত আখতার ভূঁইয়ার আদালতে শুনানি শেষে হৃদয় মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর হয়। কারাগার থেকে বের হয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করে হৃদয় মণ্ডল জানান, এ ঘটনা কেন ঘটল তা তিনি বলতে পারছেন না। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকে হতে পারে; প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে বলে মনে করেন হৃদয়। তবে তিনি এখন রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চান। হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার পরে সাংবাদিকদের জানান, অসুস্থতার কারণে তার স্বামীকে কারামুক্তির পরপরই ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে চিকিৎসক দেখাবেন। এ কারণে তিনি হয়তো সপ্তাহখানেক ঢাকায় অবস্থান করবেন। ববিতা হাওলাদারের ভাই বাবুল হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে জামিন হওয়ার পর ববিতা হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, স্বামীকে নিয়ে তিনি যেন নিরাপদে থাকতে পারেন। স্বামী যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের পর হৃদয় মন্ডলের জামিননামা দাখিল করা হয়। বিচারকের স্বাক্ষরের পর জামিননামা কারাগারে পৌঁছলে বিকাল ৫টার দিকে হৃদয় মণ্ডলকে মুক্তি দেওয়া হয়। গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. আসাদ বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন ২৩ মার্চ শিক্ষক হৃদয়কে মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালতে পাঠানো হয়। ২৩ মার্চ ও ২৮ মার্চ সদর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার দুই দফা জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়। ৫ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে ফৌজদারি মামলা করেন হৃদয়ের আইনজীবী। এতে আদালতের বিচারক ও মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আমজাদ হোসেন রবিবার আসামির জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে আদেশ দেন। শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল জামিন পাওয়ার পর তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ২২ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ভাবমূর্তি ধ্বংসের জন্য কুচক্রীরা যে ফাঁদ পেতেছিল, তা বিফলে গেছে। জামিনের রায়ে হৃদয় মণ্ডল তার অধিকার ফিরে পেয়েছেন। এটা স্থায়ী জামিন; অন্তর্বর্তী জামিন নয়। মহানবী ও কোরআন অবমাননার কোনো কিছুই সরকারপক্ষ আদালতে প্রমাণ করতে পারেনি। অডিওতে শোনা গেছে; ক্লাসে তিনি বলেছেন- ধর্ম হলো বিশ্বাসের, বিজ্ঞান হলো যুক্তির। কিন্তু ছাত্রদের কেউ সেটা না মেনে তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উত্তেজিত করতে চেয়েছে। আমরা আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি- হৃদয় মণ্ডল অবমাননাকর কোনো কথা বলেননি। বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম পল্টু বলেন, ‘আদালতকে বলেছি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এই সম্প্রীতির ভিত্তিতেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখানে কেউ যদি অন্যায় করে, তার শাস্তি হবে।’
Discussion about this post