ঢাকা: ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলকে একদিনের রিমান্ডে এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এ আদেশ দেন। রিমান্ড শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু তার বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় এ দম্পতির সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। এদিন সকালে রাসেল দম্পতিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ডের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের থানায় যে মামলাটি হয়েছে, সেটাও গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে। তদন্তের প্রয়োজনে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রথম দফা তিনদিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আজ তাকে আবার আদালতে হাজির করা হবে। তবে এ দফায় আর রিমান্ডের আবেদন করা হবে না। গুলশান থানার মামলায় রিমান্ডে থাকাকালীন ধানমন্ডি থানায় রাসেল-নাসরিন দম্পতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদী মো. কামরুল ইসলাম চকদার নামে এক গ্রাহক। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ২০ জনকে আসামি করা হয়। এর আগে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেবর) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। যা শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর)। গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ইভ্যালির চেয়ারম্যান মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত। এরপর এদিন রাতে হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় মোহাম্মদ রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া হয় মিডফোর্ড হাসপাতালে। তবে শারীরিক গুরুতর কোনো সমস্যা না থাকায় আবারও তাকে থানায় নেওয়া হয়। রিমান্ডে কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি বলে দাবি করেছেন মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, গ্রাহক জেনেবুঝেই পণ্য অর্ডার করেছে, যারা ডেলিভারি পায়নি ভবিষ্যতে টাকা পেয়ে যাবে। এখানে প্রতারণার কোনো বিষয় ছিল না। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর জানায় গণমাধ্যমগুলো। বলা হয়, স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি ইভ্যালি। যাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেনি তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অনেকের ফেরত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও দাবি করেছেন রাসেল।গ্রাহকদের টাকা আটকানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল দাবি করেন, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট তিন লাখ অর্ডার ডেলিভারি করেছে ইভ্যালি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা (১০% অ্যাডভান্স) এবং ইভ্যালিতে কেনাকাটায় একের পর এক ব্যাংক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ইভ্যালির নগদ জমার পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে রিফান্ড প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে যায়। ২০১৬ সালে প্রথমে অনলাইনে ডায়াপার বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন রাসেল। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’। প্রায় ১৭ লাখ নিয়মিত ক্রেতা, ২০ হাজারের বেশি বিক্রেতা নিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে প্রথম সারিতে উঠে আসে ‘ইভ্যালি’।
Discussion about this post