সময়নিউজ24 ডেস্ক: একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলছে। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছেন আন্দোলনকারীরা। পাল্টা কর্মসূচিতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাবনায় তিনজন, মুন্সিগঞ্জ, রংপুর ও বগুড়ায় দুইজন করে ছয়জন মাগুরায় একজন নিহত হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর ভিত্তিতে:
পাবনা: পাবনা শহরে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলেন- পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং পাবনা শহরের আরিফপুরের মাহিবুল (১৬) ও ফাহিম (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী। রোববার বেলা ১১টার দিকে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের গেটে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশাল মিছিল নিয়ে পাবনা শহরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। বেলা ১টার দিকে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলি করেন। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এসময় শিক্ষার্থীরা পাল্টা আক্রমণ করে আবু সাঈদের দুই সহযোগীকে পিটিয়ে আহত করেন এবং তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। তবে নিহতদের নামপরিচয় জানা যায়নি। আজ রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। নিহতের তথ্য নিশ্চিত করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মো. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল বলেন, ‘তাদের নামপরিচয় এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। জরুরি বিভাগে ২০ জনের বেশি আহত মানুষ এসেছেন। ‘ নিহত দুইজনই পুরুষ এবং তারা পেশায় শ্রমিক। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, ‘হতাহতের সংখ্যা এখনো বলতে পারছি না। তবে, পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি। ‘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে আজ থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘোষণা দেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ থেকেই রাজপথে অবস্থান নেওয়া এবং পুরো আগস্ট জুড়ে রাজপথে অবস্থান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
রংপুর: রংপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে নগরীর সিটি করপোরেশনের সামনে, সুপার মার্কেট, জাহাজ কোম্পানি ও পায়রা চত্বরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন নগরীর টাউন হল চত্বরে। সেই সাথে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলিতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সিটি করপোরেশনের দিকে চলে যায়। পরে টাউন হলকেন্দ্রিক অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা যোগ দিলে পাল্টা ধাওয়া করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত দুইজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
মাগুরা: মাগুরায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (রাব্বি) নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি পৌরসভার পারনান্দুয়ালী এলাকায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পরিচালক মহসিন উদ্দিন জানান, দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। তার শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত অন্তত ১০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন। এ নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে মাগুরায় ২ জন।
বগুড়া: বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত বগুড়া শহর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা। দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে দুজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার সকাল ১১টার পরে বগুড়া সদর থানা ও দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বগুড়া পুলিশ সুপার জাকির হাসান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা হলে পুলিশ সেখানে গুলি ছোড়ে। গুলিতে অনেকে আহত হন। দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলায়। আহত চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তিনি গুলিবিদ্ধ ছিলেন কি না এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দুপুর ১টা পর্যন্ত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নয়জন আহত চিকিৎসাধীন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Discussion about this post