ঢাকা: ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারকে পরাজিত করার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ দখল করে এই ভয়াবহ আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোভাযাত্রায় এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির র্যালি শুরু। নয়াপল্টনের আশেপাশের গলি থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে দুপুর থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হতে থাকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এতে করে দুপুর থেকেই রাজধানীর নাইটেঙ্গেল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয় শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কার্যালয়ে সামনে ট্রাকের ওপরে অস্থায়ী মঞ্চে র্যালি পূর্ব সমাবেশ বক্তব্যে রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে শোভা যাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে ‘বিএনপির ৪৪তম প্রতিবার্ষিকী উপলক্ষে’ এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নতুন সংসদ ও নির্বাচনের দাবি করে এবং আমাদের ভাইদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্যে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এদেরকে পরাজিত করি। এই হোক আজকে আমাদের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, শাওনের হত্যার প্রতিশোধ যদি নিতে চাই, নুর এবং রহিমের হত্যা প্রতিশোধ যদি নিতে চাই, তাহলে আজকে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ দখল করে এই ভয়াবহ আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ফখরুল বলেন, এই র্যালির মধ্যে দিয়ে সমগ্র দেশবাসী এবং বর্তমান সরকারকে জানিয়ে দেবো, বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় দল। বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এই দলকে বিকশিত করেছেন এবং জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যিনি এখনো এই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন। আর এই ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলায় সাজা নিয়ে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনি অন্তহীন আছেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আমাদের ভাই শাওনের প্রাণ গেছে। নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির অংসখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তারা এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে আমরা যে আন্দোলন করছিলাম, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভোলাতে আমাদের ছাত্রদল নেতা নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম শহীদ হয়েছেন। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকার আজকে জনগণের অধিকারকে হরণ করছে। তারা মনে করছে, গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারের জন্য এদেশের মানুষের যে ন্যায্য দাবি- সেই দাবিতে যখন তারা আন্দোলন করছে। তখন তারা (সরকার) মনে করছে, গুলি, গুম, হত্যা, খুন ও নির্যাতন করে সেই আন্দোলনকে দমিয়ে দেবে। ফখরুল বলেন, আমাদের দল থেকে খুব পরিষ্কার করে বলেছি, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই সরকারকে আমরা বাধ্য করব, তাদের পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। আমরা বাধ্য করব এই সংসদকে বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্যে দিয়ে নতুন সংসদ গঠন করে নতুন সরকার নির্বাচিত করতে। দুপুর ১টা থেকে র্যালি যোগ দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাগম হতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। র্যালিতে বিএনপিরসহ এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ব্যানারসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে অংশ নেয়। র্যালিতে নেতাকর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং শহীদ জিয়ার ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে অংশ নেন। এছাড়া র্যালিতে ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমার মনে পড়ে’, ‘লাল সবুজের পতাকায় জিয়া তোমার দেখা যায়’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বলো’, ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘গুম করে আন্দোলন বন্ধ করে যাবে না’ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন নেতাকর্মীরা। এদিকে র্যালিতে হাতি, ঘোড়ার গাড়ি, ঢোল, সাউন্ড বক্স, ছোট ছোট কয়েকটি ট্রাক নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা র্যালি যোগ দেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লাল ও সবুজ টুপি পড়ে নেতাকর্মীদের র্যালিতে অংশ নেন। অপরদিকে বিএনপির র্যালিকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশ-পাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার বলায় গড়ে তুলতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু’র সঞ্চালনায় র্যালি পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া শোভাযাত্রা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, প্রচার সস্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post