
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, দেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে নিক্সন চৌধুরী ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে। এই চক্র এহেন কোনো কুকর্ম নেই যা তারা ঘটায়নি। আর এদের দোসর হিসেবে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন শেখ হাবীব। যিনি ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে ভোল পালটে কখনো বিএনপি কখনোবা জামায়াতের পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সরকারের মদদপুষ্ট বলে পরিচিত অপরাধের শক্তিশালী চক্রের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন নিক্সন চৌধুরী। যিনি স্বতন্ত্র সাংসদ হলেও ঢাকার অপরাধ জগতের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। আর পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদও নানা অবৈধ ব্যবসায় ও চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে হাজার কোটি টাকার পাহাড় বানিয়েছেন। তাদের এসব কিছুর দেখাশোনা করতেন শেখ হাবীব৷ বর্তমানে নিক্সন ও বেনজীররা দেশছাড়া হলেও তাদের সব ব্যবসা ও নেটওয়ার্ক সচল রেখেছেন হাবীব। ৫ আগস্টের পর নিক্সন-বেনজীরদের পরিবারকে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেছেন, সামান্য এক মোবাইল অপারেটর কোম্পানির চাকরি ছেড়ে ১৬ বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া শেখ হাবীব। তিনি ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছিলেন এক ভয়ঙ্কর অপহরণ বানিজ্যের সিন্ডিকেট।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, শেখ পরিবারের নাম ব্যবহার করে হাবীব সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কালো টাকা পাচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন। ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে তাদের মাধ্যমে। যা এখন তদন্তের আওতায় রয়েছে।
বেনজীরসহ পুলিশের অন্যান্য অনেক কর্মকর্তাদের প্রভাবে শেখ হাবীবের প্রতিষ্ঠান “টপ আপ” পুলিশের জন্য বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেটসহ বিভিন্ন রায়ট ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করতো। অভিযোগ উঠেছে, জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাবীবের স্টকে থাকা ভেস্ট, হেলমেট ও গোলাবারুদ সরকার দলীয় কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যা দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
বিরোধী দলের দাবি, শেখ হাবীব-নিক্সন চৌধুরী চক্রের অবৈধ সম্পদের পাহাড় দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নিক্সন-বেনজীর ও হাবীব চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী, যারা শেখ হাবীব ও নিক্সন চৌধুরীর অপহরণ বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন। এক এক করে সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷ তাদের দাবি, শেখ হাবীবকে আটক করা গেলেই আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক রাঘব বোয়াল জালে আটকা পড়বে৷ বেরিয়ে আসবে হাসিনা শাসনামলের অপরাধের দীর্ঘ ফিরিস্তিও।
Discussion about this post