আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ উত্তাল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমেই আরও তীব্র হচ্ছে। আর এর মধ্যেই বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট ও এনডিটিভি। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ সপ্তাহান্তে প্রায় ২৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এক সপ্তাহেরও বেশি আগে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দ্রুত আমেরিকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া এই ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি পুলিশি দমন-পীড়ন এবং গ্রেপ্তার অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। এনডিটিভি বলছে, চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরেই ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছেন। ক্যাম্পাসের আইভি লিগ স্কুলের সামনে যেখানে এই পতাকা উত্তোলন করা হয় সেই জায়গাটি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া তারা ওয়াশিংটন হিলটন হোটেলের ওপরের ফ্লোরের জানালা থেকেও একটি বিশালকার ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছিল। এটি মূলত হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা সমিতির বার্ষিক নৈশভোজের স্থান। এদিকে বিক্ষোভের মধ্যেই চারটি পৃথক ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ প্রায় ২৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ১০০ জন, সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ৮০, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ৭২ জন এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া লস এঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে ইসরায়েলপন্থি এবং ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি তাঁবু ছাউনি স্থাপন করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক এই বিক্ষোভ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, চলমান বিক্ষোভ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ থাকতে হবে। বিক্ষোভরত ক্যাম্পাস কর্মীরা হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে এবং কলেজগুলোকে আগ্রাসী এই দেশটির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপশি গাজার সংঘাত থেকে লাভবান কোম্পানিগুলোর সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছেন তারা। এদিকে চলমান এসব বিক্ষোভ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় গাজার সীমান্ত শহর রাফাহতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য আক্রমণের বিষয়ে বাইডেন ‘তার স্পষ্ট অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন’। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে।
Discussion about this post