ঢাকা: বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর যে অত্যাচার করেছে আওয়ামী লীগ তার কোনো প্রতিশোধ নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে, খুন-গুম-নির্যাতন করেছে তার কোনো প্রতিশোধ আমরা (আওয়ামী লীগ) নেইনি। আওয়ামী লীগ এসব করতে চায় না। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের তৃতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহস্পতিবার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেলা ১২টার দিকে সম্মেলনের মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষকে একটা উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশ উপহার দেবেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়। দীর্ঘ ২৯ বছর মানুষের ভাগ্যকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। বঙ্গবন্ধু নারী মুক্তি, নারী শিক্ষা, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি পাকিস্তানিদের মতো দেশের মধ্যে নারীদের ওপর নির্যাতন, গণধর্ষণ, হত্যা চালিয়েছিল। একদিকে পুলিশ ও অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা অত্যাচার করেছে। আওয়ামী লীগ কিন্তু এসব করেনি, কোনো প্রতিশোধ নেয়নি। আওয়ামী লীগ এসব করতে চায় না।’ ‘বিএনপি মানে হত্যা, ধর্ষণ, খুন, গুম করা। বিএনপি দুর্নীতি-সন্ত্রাস ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। দীর্ঘ ২৯ বছর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তারা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে দেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। আজ বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ শুরু করলেও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতা এসে দেশের মধ্যে তাণ্ডব শুরু করে ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।’ ‘এমনকি সেই সময় দক্ষিণ অঞ্চলে কোনো সাংবাদিকও প্রবেশ করতে পারেনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দেশকে আরও পিছিয়ে দিয়ে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে—২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কথা বলে না। ওই সময় তারা মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছিল আর জাতীয় পার্টি ২৭টা সিট পায়। বিএনপিকে এখন জিজ্ঞাসা করা উচিত কিসের বলে তারা লাফালাফি করে।’ ‘জাতীয় পার্টি থেকে তারা কম সিট পায়, তারা আবার কিসের বলে এত কথা বলে লাফালাফি করে। ২০১৪ সালে বিএনপি দেশের অসংখ্য মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে। এজন্য দেশের মানুষ বিএনপিকে বারবার প্রত্যাখ্যান করে।’ তিনি বলেন, ‘ বিএনপি দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে, ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কারণ বিএনপি তো দল নয়। তারা গণতন্ত্রের দল নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় সেটা মানুষ জানে। এজন্য বিএনপিকে মানুষ ভোট দেয় না।’ খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া মাত্র দুইটা পরীক্ষায় পাস করেছিল, একটা হলো উর্দু আরেকটা হলো গণিত। কারণ খালেদা জিয়ার প্রিয় বিষয় হলো উর্দু। জিয়াউর রহমান মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাস। তারেক জিয়া যে কি পাস তা তিনিও জানেন না। বিএনপি ক্ষমতা আসলে জনগণের নয় বিএনপির উন্নয়ন হয়। হাওয়া ভবন নির্মাণ করে খাওয়া ভবন শুরু করে।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে কোনো মানুষ কর্মহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। দেশের মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তৃণমূল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা হবে, এভাবে কাজ চলছে। তারুণ্য শক্তি দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ অঞ্চল এক সময় অবহেলিত ছিল, এখন আর নেই। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না। ইনশাল্লাহ।’ এর আগে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। ১২টা ৮ মিনিটে সম্মেলনের মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। যুব মহিলা লীগের বিদায়ী সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে নাজমা আক্তারকে সভাপতি এবং অধ্যাপিকা অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর তিন মাস পর ২৫ জুলাই যুব মহিলা লীগের ১২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
Discussion about this post