ঢাকা: বাকশালী ইতিহাসের পূণর্লিখনে নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জের ঘটনাসহ সারাদেশে বিএনপির সমাবেশে হামলা-মামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের নমুনা প্রকাশ হচ্ছে।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যে সহনশীলতার চর্চা হয় সরকার তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অচেনা করে তুলছে বলেও অভিযোগ করেন। বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ এখন দুঃসময় পার করছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রসমাজে বিভেদ-বিভাজনের মাধ্যমে চরম মেরুকরণ করেছে।’ রিজভী বলেন, ‘একনায়কতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাকশালী ইতিহাসের পূর্ণলিখনে নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। বিচার, প্রশাসন, জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন সবাই মুখোশের আড়ালে বাকশালী চেতনা ধারণ করে আওয়ামী সরকারের পক্ষে নিরন্তর কাজ করে চলছে। তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সহনশীলতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অচেনা করে তুলছে।’ মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন আতঙ্কের মধ্যে নিমজ্জিত মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘বিরোধী রাজনীতির কর্মসূচিতে সহিংস আক্রমণ কোন গণতান্ত্রিক রীতির আওতায় পড়ে? যদিও গণতন্ত্রের কথা প্রায়শই ক্ষমতাসীনদের মুখে খই ফোটে।’ মুন্সিগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের সহিংস তান্ডবে আওয়ামী গণতন্ত্রের আরেকটি নমুনা দেখা গেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘পুলিশ এবং পুলিশের ভেতর থেকে খালি গায়ে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি করছিল বিএনপির সমাবেশে, তারা কারা?’ আওয়ামী লীগের শাসনকালকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকটের উৎপত্তিস্থল মন্তব্য করে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘অপপ্রচার, লুটপাট, বিরোধী দলের নেতাদের নামে কুৎসা রটনা, বারবার প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ, একতরফা নির্বাচন, বিরোধী কন্ঠস্বরকে নিষ্ঠুরভাবে দমন, গুমের অভিনব কর্মসূচি বাস্তবায়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো দস্যুবৃত্তি, লক্ষ লক্ষ বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে বানোয়াট মামলা ইত্যাদি আওয়ামী লীগের প্রকৃত উন্নয়নের নমুনা।’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র অভিযোগ করেন, মুন্সিগঞ্জ সদর থানার মুক্তারপুরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পরিকল্পিত গুলিবর্ষণ ও গুরুতর আহত করাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। এরপর পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ যৌথভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসা ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক আ. হাইয়ের ভাগিনা মো. নিজাম উদ্দিনের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তার সুতার ফাক্টরিটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। এই ঘটনায় আনুমানিক ২ থেকে ২.২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এসময় সন্ত্রাসী কায়দায় এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে, যাতে কেউ আগুন নেভাতে না আসে। বিএনপির এই শীর্ষনেতা অভিযোগ করে বলেন, ইতোমধ্যে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য উল্টো হামলার শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, শহর বিএনপির আহবায়ক এরাদত হোসেন মানু, সদর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব মুনির হোসেন ও জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য আতাউর হোসেন বাবুলসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত যুবদল নেতা মো. শাওন, মো. জাহাঙ্গীর ও ছাত্রদল নেতা তারেকের অবস্থা আশংকাজনক। তারা জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। রিজভী বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলকে চাপের মুখে ফেলতে সরকারের প্রকাশ্য ও গোপন অমানবিক কৌশলের বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে। স্বৈরশাসকদের ধামাধারীদের পথে পথে প্রতিরোধ করতে হবে।’
Discussion about this post