ঢাকা: ভুয়া ও মিথ্যা মামলার বাড়বাড়ন্ত রোধে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এই সংশোধনী অনুযায়ী, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়া গেলে বিচারকাজ শুরুর আগেই আদালত অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারবেন। রোববার (২৯ জুন) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা এই তথ্য জানান। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা নিজেরাই খুব বিব্রত যে ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা করা, এমনকি হয়তো মামলাটি সঠিক হলেও তাতে বহু ব্যক্তিকে আসামি করে ‘মামলা বাণিজ্য’ করা হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা দেশের শীর্ষ আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ফৌজদারি কার্যবিধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি।” নতুন বিধান সম্পর্কে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, পুলিশ কমিশনার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা যদি মনে করেন, কোনো মামলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন, তবে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে তা দিতে নির্দেশ দিতে পারবেন। তদন্ত কর্মকর্তা প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পুলিশ কমিশনার বা পুলিশ সুপার তা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে বলবেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মনে হয়, মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বিচার শুরুর আগেই তাদের মামলা থেকে মুক্তি দিতে পারবেন। আসিফ নজরুল আরও বলেন, “এই সংশোধনী কার্যকর হলে আদালত এবং পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে ‘গ্রেপ্তার বাণিজ্য’ বা ‘মামলা বাণিজ্য’ রোধ করতে পারবে। যেসব মামলায় অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে এবং প্রাথমিক তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে না, আদালত বিচার শুরুর আগে তাদের মুক্তি দিতে পারবেন। এর ফলে ভুয়া মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।” তিনি স্পষ্ট করেন যে এই সংশোধনী তদন্ত প্রক্রিয়া থামিয়ে দেবে না। যদি পরবর্তীতে চূড়ান্ত তদন্তে মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে জমা দিতে পারবে।
Discussion about this post