ঢাকা: পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের অন্তত পাঁচটি দোকান রয়েছে যারা ডাকাতির স্বর্ণ কিনে থাকে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন। এর আগে ডাকাতিতে ব্যবহৃত স্পিডবোটসহ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দার সোহরাবকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সংবাদ সম্মেলনে ইমাম হোসেন বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম নরসিংদী থেকে আনোয়ার নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে নরসিংদী জেলা পুলিশ। তিনি সিলেটে মাজার জিয়ারতে গিয়েছিলেন। সেখানে থেকে ফেরার পথে আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশুলিয়ায় নয়াহাটবাজারে এবং ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় ডাকাতির সাথে জড়িত কমপক্ষে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তার মধ্যে ১০ জনের মত আশুলিয়ায় ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এদের নেতৃত্ব দেন সোহরাব নামের একজন। তার নেতৃত্বেই রাপা প্লাজায় ডাকাতি হয়। ইমাম হোসেন বলেন, এরা সবাই মাওয়া ঘাটে এক হয়। তাদের ধরণা, অন্যসব জায়গায় এক হলে মানুষের সন্দেহ দৃষ্টি হতে পারে। আর মাওয়া ঘাটে অনেক লোক থাকায় কেউ সন্দেহ করে না। একটি স্পিডবোটে তারা নদীতে যায়। সেখানে শাহিন ও দানেশ তুরাগ নদী হয়ে আশুলিয়ায় যায়। ডাকাতি করার তিনদিন আগে তারা আশুলিয়ায় নয়াহাটবাজারে রেকি করে যায়। যেসব দোকানে তারা ডাকাতি করবে সেই দোকানগুলো আগেই চিহ্নিত করেছিল। ডাকাতির সময়ে তারা তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ও দুইজন সাধারণ মানুষের সামনে পড়েছিলো। তবে তাদেরকে একটি দোকানের মধ্যে আটকে রেখে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। ইমাম হোসেন বলেন, ডাকাতি করা সোনা কেনে তাঁতীবাজারের কিছু দোকান। আবার কিছু দোকান যারা সোনা গলায়। আশুলিয়া থেকে ডাকাতি করা সোনা ২৯ লাখ টাকায় বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। এদের মধ্যে সোহরাব পেয়েছেন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। আর সবচেয়ে যিনি কম পেয়েছে তার ভাগে পড়েছে ৬৫ হাজার টাকা। ইমাম হোসেন বলেন, ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় ডাকাতির সময়ে তারা দিনের বেলায় বাথরুমে লুকিয়ে থাকে। আর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে আবদুর রহিম ও সবুজকে নিয়ে আসে সোনা চেনার জন্য। পরে তারা বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে ডাকাতি করে। চার থেকে পাঁচটি শাবল দিয়ে চাপ দিয়ে সিন্দুক ভেঙে তারা লুটে নেয় নগদ টাকা ও সোনা। এরপর যে যার মতো পালিয়ে যায়। আশুলিয়া ও ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় ডাকাতির ঘটনায় ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়। এদের মধ্যে সোহরাবর, আবদুর রহিম, দেলোয়ার ও সবুজ রায় দুটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিল। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, পরবর্তীতে আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির নেতৃত্বদানকারী সোহরাব হাওলাদারকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরআগেও এই মামলায় শাহানা, আনোয়ার, দেলোয়ার, সবুজ রায়, আবদুর রহিম, আল মিরাজ ওরফে মিন্টু,কামাল, শাহিন শেখ, মো. দানেশ ফকির এবং মো. সুমন মিয়াকে আদালতে হাজির করলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর আগে ঢাকার নয়াবাজারের আবদুর রহিমের বাসা থেকে আশুলিয়ায় ডাকাতির ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। যার দাম ১৪ লাখ টাকা। আর শাহানা আক্তারের কাছ থেকে লুট করা স্বর্ণ বিক্রির দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৪০ টাকা এবং চার ভরি স্বর্ণ যার দাম দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, আশুলিয়ার নয়াহাটবাজারে ডাকাতির মামলার তদন্তের সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর রাপা প্লাজার স্বর্ণের দোকানের ডাকাতির মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়। সিআইডির কাছে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সবুজ রায় ও আবদুর রহিম আরো তিন থেকে চার জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আসামি সবুজ ও আবদুর রহিমের স্বীকারোক্তমতে পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার ইসলামপুরে সবুজের বাসা থেকে রাপা প্লাজায় ডাকাতির ১২ ভরি স্বর্ণ যার দাম আট লাখ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে ওই মামলার সাথে জড়িত আসামি ইসমাঈল এবং মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় ডাকাতি হয়। এ সময়েতারা দোকানের শার্টার ভেঙে ২০০ ভর্তি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। যা দেশব্যপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এবং খায়রুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post