আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাসায়নিক পরমাণু অথবা স্ট্র্যাটেজিক পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করতে রাশিয়াকে সতর্ক করেছেন। বাইডেন বলেন, এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হলে যুদ্ধের চেহারা এমনভাবে বদলে যাবে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কখনও দেখা যায়নি। তবে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে সে বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিছু বলেননি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পরমাণু শক্তিকে বিশেষ সতর্কাবস্থায় রাখার কথা ঘোষণা করেছিলেন। রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের তিনি বলেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্বের ‘আগ্রাসী মনোভাবের’ কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্প্রতি রুশ সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ইউক্রেনের কিছু এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলোতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো এখন আরও কট্টর কৌশল গ্রহণ করতে পারেন। প্রায় ৮০ বছর ধরে বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। অনেক দেশই এই অস্ত্রকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসেবে মনে করে। ধারণা করা হয় যে, রাশিয়ার কাছে ৫ হাজার ৯৭৭টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এই হিসাব দিয়েছে মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি ফেডারেশন। তারা বলছেন, এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ওয়ারহেডের মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং সেগুলো বাতিল করে দেওয়ার কথা। বাকি সাড়ে চার হাজার কিংবা তার চেয়েও কিছু বেশি ওয়ারহেডের মধ্যে বেশিরভাগ কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট, যা দূরপাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম। বাকি অস্ত্রগুলো ছোট বা কম বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র যা স্বল্পপাল্লা বা কম দূরত্বের। এগুলো মূলত যুদ্ধক্ষেত্র বা সাগরে ব্যবহারযোগ্য অস্ত্র। তবে এর মানে এই না যে, রাশিয়ার হাজার হাজার দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত আছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই মূহুর্তে রাশিয়ার প্রায় ১ হাজার ৫শ ওয়ারহেড মোতায়েনকৃত অবস্থায় আছে, যার অর্থ হচ্ছে সেগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু ঘাঁটি এবং সমুদ্রে সাবমেরিনে বসানো আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত খুব কম। সমরবিদরা বলছেন, তুলনামূলকভাবে অল্প দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ট্যাকটিক্যাল পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে। আর স্ট্র্যাটেজিক পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে বহু দূরের টার্গেটে আক্রমণ করার জন্য। স্ট্র্যাটেজিক পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হলে সেটা পরমাণু যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। সিবিএসের ৬০ মিনিট অনুষ্ঠানের জন্য জো বাইডেন হোয়াইট হাউজে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন। এসময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পুতিন যদি গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করে থাকেন তাহলে এ বিষয়ে তিনি তাকে কী বলবেন? সে সময় জো বাইডেন বলেন, এটা অবশ্যই করা উচিত হবে না। এরপর বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় পুতিন যদি সেই সীমারেখা অতিক্রম করেন তাহলে তার জন্য এর পরিণতি কী হতে পারে? বাইডেন বলেন, আপনি কি মনে করেন যে, এটা যদি আমি সত্যি সত্যি জানি তাহলে সেটা আমি আপনাকে বলবো? আমি সেটা আপনাকে বলবো না। তবে এর পরিণতি তো আছেই। তিনি সতর্ক করে বলেন, তারা বিশ্বের কাছ থেকে আরো বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, যা তারা এর আগে কখনও হয়নি এবং তারা কী করে তার উপরই নির্ভর করে এর জবাবে কী ঘটবে।
Discussion about this post