মোস্তাফিজুর রহমান সুজন(পটুয়াখালী): দ্বিতীয়বারও আওয়ামীলীগকে হারিয়ে বিপুল ভোটে মেয়র হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন আহম্মেদ। মহিউদ্দিনকে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ ছিল সরকার দলীয় মন্ত্রী-এমপি এবং জেলা-উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালীরা। ২০১৯ সালের পৌর নির্বাচনেও জেলা আ.লীগের সভাপতি কাজী আলমগীরকে হারিয়ে মেয়র হন মহিউদ্দিন। তৎকালীন নির্বাচনেও মহিউদ্দিনকে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ ছিল আওয়ামীলীগ। পরবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী খলিলুর রহমান মোহনকে হারিয়ে চেয়ারম্যান হন মহিউদ্দিন আহম্মেদের সারথি এ্যাড.হাফিজুর রহমান (হাফিজ)। ওই নির্বাচনেও হাফিজকে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ ছিল আওয়ামীলীগ। এসব নির্বাচনের কোনটিতে বিএনপি অংশ নেয়নি;অথচ সরকার দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি অব্যাহত রয়েছে। সরকার দলীয় নেতাকর্মীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পদ বিতারিত দুই তরুনের ক্রমাগত জয়ে কোনঠাশা হয়ে পরছে আওয়ামীর প্রকৃত নেতা-কর্মীরা। এসব ঘটনায় দলের নীতি-নির্ধারকের নেতৃত্ব ও ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নৈতিক স্খলন জনিত পোষ্টে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তোলপাড়। দলের ভবিষ্যত নিয়ে নানা অশনি সংকেত জানিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন নেতাকর্মীরা । এদিকে গত ৯ মার্চ পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী মহিউদ্দিনের প্রার্থীতার বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের ঘোষনা দিয়েছে বিজিত প্রার্থী ডাঃ শফিকুল ইসলামের পারিবারিক আত্মীয় পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি এ্যাড. সুলতান আহম্মেদ মৃধা। তিনি বলেন-“মহিউদ্দিন ঋণ খেলাপি থাকায় তার প্রার্থীতা বাতিল হয়। পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুলের দায় আমরা নেবো কেনো? স্থানীয় সরকার নীতিমালা অনুযায়ী মহিউদ্দিন ঋণ খেলাপি। তাছারাও ইভিএম কারচুপি এবং ভোট গ্রহনের ধীরগতিতে আমরা হেরেছি। মহিউদ্দিন আহম্মেদের প্রার্থীতা নিয়ে আইনী লড়াই করবো”। বিজিত প্রার্থী ডাঃ শফিকুল ইসলাম বলেন-“মহিউদ্দিন আহম্মেদ ঋণ খেলাপি হয়েও কালো টাকা প্রভাবে প্রার্থীতা টিকিয়েছেন। যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ও সমর্থন থাকা সত্বেও আমি ইভিএম প্রযুক্তি ও কালো টাকা কাছে হেরেছি। মহিউদ্দিন আহম্মেদ টাকায় ভোট কিনেছেন,যা ওপেন সিক্রেট। অভিযোগ অস্বীকার করে মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন-আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ এতটা বোকা নয় যে,টাকায় ভোট দেবে। ডাঃ শফিকুল ইসলাম র্দীঘদিন ক্ষমতায় থেকে তেমন কোন উন্নয়ন করতে পারেনি । শহরের অলিগলিতে প্রশস্থ সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা আলোকসজ্জা নিশ্চিত করে দৃষ্টি নন্দন ও বাসযোগ্য শহর গড়েছি। দলমত নির্বিশেষে সু-শৃঙ্খল ও সাবলীল নগরী উপহার দেয়ায় মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফুর্ত ভোটে দ্বিতীয়বার বিজয়ী করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগ,যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কয়েক নেতা বলেন-দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ডাঃ শফিকের প্রচারনা করলেও ভোটের রাজনীতিতে হেরে যান। শুরু থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত শাফিক সমর্থীত নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলেও কতিপয়রা শেষ মুহুর্তে ভোল পাল্টে মহিউদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে গোপনে সমন্বয় করেন। যে কারনে ভোটের দিন অনেক নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। তাছাড়া ব্যক্তি শফিকুল ইসলাম মানবিক হলেও তার পাশের লোকজন নিয়ে যথেষ্ট বির্তক আছে। ভোট পরবর্তী সময়ে এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। সুত্রটি আরও বলেন-এক সময়ে হাফিজ-মহিউদ্দিন দলের নীতি-নির্ধারকদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ওঠবস করত। এখন তাদের টপকে নেতৃত্বের জায়গা তৈরী করেছেন হাফিজ-মহিউদ্দিন। ভোটের রাজনীতিতে এই জুটি কাছে রীতিমত নাকাল হচ্ছে আওয়ামীলীগ। ইতোমধ্য হাফিজ-মহিউদ্দিনের আরেক সারথি রেজাউল করিম সোয়েব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছে। তাছাড়া পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি ও ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিব্বুর রহমান মহিব,পটুয়াখালী-০১ আসনের এমপি (জাপার নেতা) এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার,জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কাজী আলমগীর, শহর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড.তারিকুজ্জামান মনি,যুবলীগ নেতা আরিফুজ্জামানা রনিসহ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠারা ডাঃ শফিকুল ইসলামকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েও জেতাতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান,জেলা যুবলীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম এবং সম্পাদক সৈয়দ সোহেল, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ,স্বেচ্ছা সেবকলীগ লীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত হাসান সজীব এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা মহিউদ্দিনের পক্ষে কাজ তাকে বিজয়ী করেছেন। মহিউদ্দিনের সঙ্গে ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে ডাঃ শফিকুল ইসলাম হেরেছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে নেতৃত্ব ও চারিত্রিক স্খলন। পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীর যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাড. গোলাম সরোয়ার ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন-শফিকুল ইসলামের পরাজয়ে দল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অধিকাংশ নেতাকর্মী মহিউদ্দিনের পক্ষে ছিল। আমাদের সঙ্গে শ্রমিকলীগ, ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী ছিল। কালো টাকার কাছে ডাঃ শফিক হেরেছে, ভোট এবং জনসমর্থনে নয়”। দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যারা মহিউদ্দিন আহম্মেদের পক্ষ করেছে; তারাই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের বিপক্ষে কাজ করেছে।
Discussion about this post