কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সদের অবহেলায় সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।তাদের অভিযোগ, নবজাতক দু’জনের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাওয়া দেখে কর্তব্যরত নার্সদের বারবার ডাকা হলেও তারা আসেননি। রুমে বসে তারা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ স্বজনদের। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে পরপর দুই নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ সময় মৃত দুই নবজাতকের স্বজনরা কান্নাকাটিসহ নার্সদের দোষারোপ করে হট্টগোল শুরু করলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মৃত দুই নবজাতক হলো কুড়িগ্রাম পৌরসভার ছয়ানীপাড়া এলাকার দিলীপ চন্দ্র রায়ের নবজাতক কন্যা এবং রাজীবপুর উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের রবিউল ইসলামের নবজাতক কন্যা। গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দু’জনেই জন্মগ্রহণ করে। মৃত নবজাতকের পিতা দিলীপ চন্দ্র রায় জানান, গত শনিবার জেনারেল হাসপাতালে তার স্ত্রী অঞ্জনা কন্যা সন্তান প্রসব করেন। স্বাভাবিক প্রসব হলেও জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছে বলে তার নবজাতক কন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সোমবার সকালে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থাপত্র দেন কর্তব্যরক চিকিৎসক। দিলীপ রায় আরও বলেন, ওষুধ আর স্যালাইন নিয়ে এসে তা নার্সদের দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা তা না করে রুমে বসে মোবাইলে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এখনও সেই স্যালাইন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এরপর দুপুরে নবজাতক কন্যার নাক থেকে অক্সিজেনের লাইন খুলে গেলে তা ঠিক করার জন্য নার্সদের ডাকি। কিন্তু তারা ধমক দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে আমার কন্যা মারা যায়। নবজাতক কন্যার মৃত্যুর জন্য নার্সদের অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভোগী এই পিতা। এদিকে মৃত অপর নবজাতক কন্যার পিতা রবিউল ইসলাম অভিযোগ, তার কন্যাকে চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ খাওয়ানোর জন্য ডাকা হলেও কর্তব্যরত নার্সরা আসেননি। ফলে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে কখন তার কন্যা মারা গেছে টেরও পাননি। পরে দুপুরের দিকে দেখেন নবজাতক কন্যার কোন সাড়া শব্দ নেই। তখনও নার্সরা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অন্যান্য শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, নার্সরা ডিউটি রুমে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে বেশি। কোনও সমস্যার কথা বললে তারা খারাপ আচরণ করেন।
সোমবার বিকেলে শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স তুলশি রানী ও উর্মিলা সাহা বলেন, দুপুরে দুই নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার সময় তারা ডিউটিতে ছিলেন না। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স কাকলী বেগম বলেন, তিনি ঘটনার সময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অফিস কক্ষে মিটিংয়ে ছিলেন। দুপুরে হট্টগোল শুনে শিশু ওয়ার্ডে আসেন। তিনি জানান, যে দুই নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে তাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হলেও অভিভাবকরা নিয়ে যাননি। বন্ড সই করে এখানে চিকিৎসা নেওয়ার জন্যে রেখে দেন। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের ৪৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে ১১৮ জন। ফলে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম সংখ্যক নার্স সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এজন্য ডিউটিতে কিছুটা ভুল ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। তবে তা কোন ক্রমেই বড় কোন ত্রুটি বা অবহেলার ঘটনা নয়। এ প্রসঙ্গে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, হট্টগোল শুনে সাথে সাথে শিশু ওয়ার্ডে যান। মূলতঃ নবজাতক দু’জনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এজন্য তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, নার্সদের বিরুদ্ধে মৃত দুই নবজাতকের স্বজনদের অভিযোগ শুনেছি। যেহেতু হাসপাতাল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। তাই এর ফুটেজ পরীক্ষা করলে সবকিছু স্পষ্ট হবে। এতে কারও আচরণবিধি বহির্ভূত দেখা গেলে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা কারও কাম্য নয়।
Discussion about this post