নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় গত দুই মাসে অন্তত ৩৫টি গরু চুরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ফেরিওয়ালা সেজে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে ! এ ধরনের চুরির কারণে কৃষকেরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। অনেক এলাকায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। চুরি হওয়া একেকটি গরুর মূল্য ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা। অনেক টাকা খরচ করে লালন-পালন করার পর গরু চুরির ঘটনায় কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা। ভুক্তভোগীরা বলেন, চোরেরা ফেরিওয়ালা সেজে গরু চুরি করছে। গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে নড়াইল সদরের কলোড়া ইউনিয়নের বীড়গ্রামের রেমন্ত বিশ্বাস রেবোর দুটি গরু চোরেরা গোয়ালঘর থেকে খুলে নিয়ে যায়। গৃহকর্তা বিষয়টি বুঝতে পেরে পাড়া-প্রতিবেশীকে জানান। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাশের মুশুড়ি, বিজয়পুর ও উজিরপুর এলাকার মানুষকেও জানানো হয়। শতাধিক মানুষ একত্র হয়ে দু-জনকে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে তারা মারা যান। এদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেলেও আরেকজনের পরিচয় মেলেনি। গণপিটুনিতে নিহত এক ব্যক্তিকে ঘটনার দিন মুড়ির মোয়া বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাঁচ থেকে সাতজন চোর গরু চুরি করতে আসেন। এর মধ্যে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও দুজন গণপিটুনিতে মারা যায়। ভুক্তভোগী বীড়গ্রামের সুশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী রচনা জানান, এক মাস আগে প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের গরু তার গোয়াল থেকে চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কলোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) আশিষ বিশ্বাস বলেন, একের পর এক গরু চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত গ্রামবাসী রাত জেগে প্রতিনিয়ত পাহারা দিচ্ছেন। গত কয়েকদিনে অত্র ইউনিয়নের মুশুড়ি গ্রামের বিপুল বিশ্বাস বীড়গ্রামের রচনা বিশ্বাস এবং হরিচাঁদ বিশ্বাসের একটি করে গরু চুরি হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। আউড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম পলাশ জানান, গত দেড় মাসের ব্যবধানে লস্করপুর গ্রামের হাসেম কাজীর পাঁচটি, কুতুব মোল্যার তিনটি ও হক মোল্যার একটি গরু এবং মুড়দাইড় গ্রামের ইমরান চৌধুরীর দু’টি গরু চোরেরা নিয়ে গেছে। ভদ্রবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সজিব মোল্যা বলেন, আমাদের ইউপি মেম্বার রায়খালী গ্রামের রুমিছা বেমমের দু’টিসহ চারটি গরু চুরির ঘটনায় গ্রামবাসী আতঙ্কিত। অনেকে ঠিকমত ঘুমাতে পারছেন না। নড়াইল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজু মোল্যা জানান, প্রায় দেড় মাস আগে উজিরপুর এলাকার রামপদ বিশ্বাসের পাঁচটি এবং প্রশান্ত বিশ্বাসের একটি গরু চুরি হয়েছে। এদিকে গরু চুরির পাশাপাশি গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে নড়াইল পৌরসভার প্রয়াত মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের দোকানের সামনে থেকে ১২টি ব্যারেলে থাকা দুই হাজার ৯০০ লিটার ডিজেল চুরি হয়েছে। যার মূল্য ব্যারেলসহ ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গত ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদ এলাকার স’মিল চত্বর থেকে খবির মোল্যার অটোভ্যান চুরি হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি নড়াইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি অটোবাইক ও অটোভ্যান চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে লোহাগড়া উপজেলা সদরেই অন্তত ১৫টি বাড়িতে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চুরির ঘটনা বেড়েছে। করোনাকালীন সময়েও অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন। সবমিলে সংকট তৈরি হওয়ায় স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা, মোটরসাইকেল, অটোবাইক, অটোভ্যান, গরুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরির ঘটনা বেড়েছে। এছাড়া ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব থাকায় এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলায় গরু চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি এলাকাবাসীকে পাহারার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে বীড়গ্রামে গরু চুরি করতে আসা দু’জনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেন এলাকাবাসী। চোরেরা ফেরিওয়ালা সেজে গরু চুরি করছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
Discussion about this post