স্পোর্টস রিপোর্ট: নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম চলতি টি২০ বিশ্বকাপে আতঙ্কের ভেন্যু হয়ে উঠেছে ব্যাটারদের জন্য। বিগ হিটিংয়ে সিদ্ধহস্ত ব্যাটাররাও এখানে এসে রীতিমতো গলদঘর্ম রান তুলতে। সেই ব্যাটিং বদ্ধভূমিতেই সোমবার আরেকটি লো-স্কোরিং থ্রিলারে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। মাঠে উপস্থিত অগণিত বাংলাদেশী সমর্থকদের সমর্থনে তানজিম হাসান সাকিব আর তাসকিন আহমেদ রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাদের দাপটে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১০৯ রান করে বাংলাদেশ। টানা ৩ জয়ে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে সুপার এইট অনেকটাই নিশ্চিত করল প্রোটিয়ারা। যদি নেপাল ও নেদারল্যান্ডস সব ম্যাচ জিতে যায় তাহলেই শুধু তাদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকবে গ্রুপ পর্ব থেকে। বাংলাদেশ পরের দুই ম্যাচ জিতলে প্রোটিয়াদের নিয়ে সুপার এইটে উঠবে। টি২০তে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ নিয়ে ৯ বার মুখোমুখি হয়ে জিততে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। এই প্রথম এত কম রান নিয়েও টি২০তে জয় পেল প্রোটিয়ারা। টস জিতে ব্যাটিং নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ সৌম্য সরকারের পরিবর্তে নেয় জাকের আলী অনিককে। শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন কুইন্টন ডি কক। প্রথম ওভারে তিনি তানজিম হাসান সাকিবের বলে একটি করে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে ১১ রান তুলে নেন। তবে তানজিম শেষ বলে রিজা হেনড্রিকসকে (০) এলবিডব্লিউ করেন। তাসকিন আহমেদের করা পরবর্তী ওভারে একটি ছক্কাসহ ৭ রান নেন কক। কিন্তু এরপর তানজিম-তাসকিন তাদের লেন্থ খুঁজে পেয়ে দুর্দান্ত বোলিং করে চেপে ধরেন প্রোটিয়া ব্যাটারদের। পরের ৩ ওভারে মাত্র ৬ রানে ৩ উইকেট তুলে নেন তারা। ১১ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ১৮ রান করা কক ও ত্রিস্তান স্টাবসকে (৫ বলে ০) তানজিম এবং অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে (৪) শিকার করেন তাসকিন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪ উইকেটে ২৫ রান তোলে প্রোটিয়ারা। পঞ্চম উইকেটে হেইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার ৭৯ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন। লেগস্পিনার রিশাদ হোসেনের ওপর চড়াও হয়ে ক্লাসেন দশম ওভারে দুই ছক্কায় ১৪ রান তুলে নেন। ১১তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে ১৩ রানে থাকা মিলারের কট বিহাইন্ড মিস করেন লিটন দাস। সেই মিলার ১৯তম ওভারে রিশাদের লেগস্পিনে বোল্ড হন ৩৮ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২৯ রানে। এর আগেই ৪৪ বলে ২ চার, ৩ ছয়ে ৪৬ করা আক্রমণাত্মক ক্লাসেনকে বোল্ড করে ব্রেক থ্রু দেন তাসকিন। এরপরও শেষ ৫ ওভারে ২ উইকেটে ২৯ রান তোলে প্রোটিয়ারা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা। আগের ৭ ম্যাচে কখনোই একাধিক উইকেট না পাওয়া তানজিম ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। ১৭টি ডট বলও দেন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমান ১৬ ডটে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। তাসকিন ৪ ওভারে ১৯ রানে নেন ২ উইকেট। সাকিব ১ ওভার বোলিং করে ৬ রান দেন। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কাগিসো রাবাদার দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শেষ বলে কট বিহাইন্ড হন তানজিদ (৯ বলে ৯)। এরপর শান্ত-লিটনের সতর্ক ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে ২৯ রান তুলে ফেলেন। তবে বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই লিটনকে (১৩ বলে ৯) সাজঘরে ফিরিয়েছেন। চারে নেমে সাকিব (৩) ও শান্ত (১৪) আনরিখ নরকিয়ার বাউন্সারে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন। এরপর তাওহিদ হৃদয় আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪৪ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে তাওহিদ ৩৪ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৭ রানে এলবিডব্লিউ হলে জুটি ভাঙে। শেষ ১৭ বলে ১৮ রান প্রয়োজন হলেও সেটি আর করা সম্ভব হয়নি নরকিয়া ও রাবাদার দারুণ বোলিংয়ে। মহারাজের করা শেষ ওভারে ১১ রান প্রয়োজন থাকলেও কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি জাকের (৯ বলে ৮) ও মাহমুদুল্লাহ। দুজনই সাজঘরে ফিরেছেন তুলে মারতে গিয়ে। ২ বলে ৬ রানের প্রয়োজন থাকতে মাহমুদুল্লাহ তুলে মারলেও বাউন্ডারি ঘেঁষে দৌড়ে এসে মার্করাম অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে দলকে জিতিয়েছেন। তিনি ২৭ বলে ২ চারে ২০ রান করেন। শেষ বলে তাসকিন ১ রান করেন। ৭ উইকেটে ১০৯ রান করে বাংলাদেশ ৪ রানে হেরে যায়। মহারাজ ৩টি এবং নরকিয়া ও রাবাদা ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস: ১১৩/৬; ২০ ওভার (ক্লাসেন ৪৬, মিলার ২৯, কক ১৮; তানজিম ৩/১৮, তাসকিন ২/১৯, রিশাদ ১/৩২)।
বাংলাদেশ ইনিংস: ১০৯/৭; ২০ ওভার (তাওহিদ ৩৭, মাহমুদুল্লাহ ২০, শান্ত ১৪; মহারাজ ৩/২৭, নরকিয়া ২/১৭, রাবাদা ২/১৯)। ফল ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ হেইনরিখ ক্লাসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
Discussion about this post