ঢাকা: একটু স্বস্তি নিয়ে বাজার করতে বৃহত্তর মোহাম্মদপুর এলাকার নাগরিকদের পছন্দের শীর্ষে ‘কৃষিমার্কেট’। কাছাকাছি দূরত্বের টাউনহল মার্কেটেও মানুষের ভিড় থাকে দিনরাত। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম যখন ঊর্ধ্বগতি তখন কোনো বাজারে গিয়েই স্বস্তি খুঁজে পান না ক্রেতারা। শুধু তাই নয়, দুই বাজারের দূরত্ব মাত্র দশ মিনিটের পায়ের হাঁটার পথ হলেও নিত্যপণ্যে কেজিপ্রতি দামেরও হেরফের রয়েছে এই দুই বাজারে। কৃষিমার্কেটে যে করলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, সেই করলা টাউনহল কাঁচাবাজারে দাম হাঁকা হচ্ছে ১০০টাকা। শুধু করলাই নয়, অন্যান্য কাঁচামালের দামেও কম-বেশি পার্থক্য দেখা গেছে এই দুই বাজারে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর এই দুটি বড় বাজার সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। পণ্যের এমন দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তবে বাধ্য হয়ে এই দামেই কেনাকাটা সারছেন নগরবাসী। অন্যদিকে যৌক্তিক কারণ না দেখাতে পারলেও পাশাপাশি দুই বাজারে দামের এমন পার্থক্য নিয়ে অজুহাতের শেষ নেই বিক্রেতাদের। কেউ বলছেন, সরবারহ কম। কেউ আবার বেশি দামে কেনায় কম রাখা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন। দেশে একেক সময় নির্দিষ্ট কিছু নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনা অতীতে দেখা গেলেও বেশ কয়েকবছর ধরে একাধিকবার একসঙ্গে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ার ঘটনা ঘটছে। দাম বাড়ার জন্য নানা অজুহাত দিলেও খুব বেশি যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ ভরা মৌসুমেও কখনো পেঁয়াজের দাম, কখনো আলু দাম হু হু বেড়ে যাওয়ার ঘটনায়ও আছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পর সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির দৃশ্যও দেখা গেছে অনেকবার। এমন অবস্থায় বারবার চেষ্টা ও ঘোষণা করেও ক্রেতাদের জন্য কোনো সুখবর দিতে পারেনি সরকার। চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অধিক লাভের আশা ও সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে কাঁচামালবাহী পরিবহনে পথে পথে চাঁদা দেওয়া ও তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের। কৃষিমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন সবজির দাম বেশি। ফুলকপি ৫০, টমেটো কেজিপ্রতি ৫০, মটরশুটি ৮০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, বেগুন ৫০, মরিচ ৮০ টাকা, করলা ১২০, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি ১৮ টাকা আর ছোট আলু ৩০ টাকা কেজি। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি রাখা হচ্ছে ১৬০ টাকা। সোনালি (পাকিস্তানী) মুরগি ২৮০ টাকা। গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে। আর চালের বাজার ঘুরে দেখা গেলো মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৫, নাজিরশাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর দেশি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দোকানি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনি। বেশি দামে বিক্রি করি। কিন্তু কম দামে বিক্রি করে লস তো করা যাবে না।’ এদিকে টিসিবির পক্ষ থেকে সব বাজারে পণ্যের তালিকা টানানোর নির্দেশনা থাকলেও কোথাও এটি দেখা যায়নি। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে ঘুরেও দেখা যায় একই চিত্র। এই বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা সবার ভাষ্য অন্য সময়ের চেয়ে এখন সব সবজির দাম বেশি। এই বাজারে ফুলকপি, শিম, বেগুন, পেঁপের দাম কৃষি মার্কেটের মতোই দেখা গেছে। তবে টমেটো, করলা ও মরিচের দাম টাউনহলে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০টাকা পর্যন্ত কম দেখা গেছে। এই বাজারে টমেটো ৩০, করলা ১০০ ও কাঁচা মরিচ ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। তবে মুরগির দাম কৃষি মার্কেটের তুলনায় টাউন হলে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০টাকা ও খাসির মাংস সর্বোচ্চ ৯৫০টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। দুই বাজারের মধ্যে টাউনহল বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা কম দেখা গেছে। এদিকে বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্ধ ক্রেতারা। বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের রোজগার তো আর বাড়ছে না। পাশাপাশি বাজারেও দেখি দাম কোথাও কম, কোথাও বেশি। এসব মনিটরিং কে করবে?’
Discussion about this post